একদিকে যেমন রোজই দ্রুত হারে বাড়ছে সংক্রমণ, তেমনি আবার একনাগাড়ে লকডাউন চালিয়ে যাওয়াও রাজ্যবাসীর পক্ষে সুখকর নয়। তাই দুদিক বজায় রেখেই মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলকে নিয়ে সোমবার জরুরি বৈঠকে বসেন তিনি। আর সেখানেই সিদ্ধান্ত নেন প্রক্ষিপ্ত লকডাউনের। ব্যাঙ্কের জন্যও সপ্তাহে দু’দিন ছুটি ঘোষণা করে দিলেন। দেশের মধ্যে বাংলাই প্রথম রাজ্য হিসেবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চলেছে দেশে। যে মডেলকেই সমর্থন করছে বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে ভারতের সর্বোত্তম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স-ও (আইআইএসসি)।
প্রসঙ্গত, দেশজোড়া দীর্ঘ লকডাউনেও ঠেকিয়ে রাখা যায়নি কোভিডের ছড়িয়ে পড়া। ইতিমধ্যেই বহু রাজ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে গোষ্ঠী সংক্রমণ। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশে আনলকের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। পরিস্থিতি নিয়ে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ তো রয়েছেই। উদ্বেগ বাড়ছিল প্রশাসনিক মহলেও। এমনই এক পরিস্থিতিতে সোমবার বিকেলে নবান্নে জরুরি বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার-সহ শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন তিনি।
অর্থনীতি এবং রুজি-রোজগার সচল রাখতে আনলকের প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া হলেও সংক্রমণকে যে অবাধে বাড়তে দেওয়া যায় না, বৈঠকের শুরুতেই সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন মমতা। এরপর বৈঠক থেকেই বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সব মহলের পরামর্শ নেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন ‘প্রক্ষিপ্ত লকডাউন’ চলবে। সারা সপ্তাহ জুড়ে সর্বত্রই সামাজিক দূরত্ব বিধি কঠোর ভাবে পালন করা এবং সপ্তাহে অন্তত দু’দিন সবাই মিলে ঘরবন্দি থাকা— এতে সংক্রমণের শৃঙ্খল অনেকটাই ভেঙে দেওয়া যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
শুধু সপ্তাহে দু’দিন লকডাউনের সিদ্ধান্তেই থেমে না থেকে, ব্যাঙ্ক কর্মীদের জন্যও পদক্ষেপ করেছেন মমতা। সপ্তাহে ছ’দিন করেই কাজ হচ্ছিল ব্যাঙ্কে এত দিন। এনআই অ্যাক্টের আওতায় সোমবার রাজ্য ঘোষণা করেছে যে, বাংলায় আপাতত রবিবারের পাশাপাশি শনিবারও ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে। ব্যাঙ্ক খোলা রাখার সময়সীমা কমিয়ে দেওয়ার জন্যও নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো, এর বেশি আপাতত ব্যাঙ্ক খোলা রাখার প্রয়োজন নেই বলে রাজ্য সরকার মনে করছে। ব্যাঙ্কগুলিতে রোজ যতজন কর্মী আসছেন, ততজনকে রোজ না এনে কম সংখ্যক কর্মী দিয়ে কাজ চালানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মমতা যেভাবে এই নতুন ধাঁচের লকডাউন পরিকল্পনা করেছেন, প্রায় তেমন ধরনের লকডাউনের পরামর্শই আইআইএসসি-র তরফ থেকেও আসছিল। এই সেরা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সারা সপ্তাহ কঠোর ভাবে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলা এবং সপ্তাহে এক দিন বা দু’দিন সব স্তব্ধ রেখে পুরোপুরি ঘরবন্দী থাকা অনেকটা কমাতে পারে কোভিডের ছড়িয়ে পড়া। আইআইএসসি-র গবেষকদের তৈরি করা একটি হিসেব জানাচ্ছে, দেশে সংক্রমণের হার এখন যে রকম, তাতে ১ সেপ্টেম্বরে ভারতে প্রায় ২৬ লক্ষে পৌঁছে যাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। আর যদি সপ্তাহে অন্তত একদিন করে দেশজোড়া কঠোর লকডাউন চালানো যায়, তা হলে ওই সংখ্যা ১৬ লক্ষের মধ্যে বেঁধে রাখা সম্ভব।