প্রজ্ঞা দেবনাথ থেকে কুখ্যাত জঙ্গী আয়েশা জান্নাত মোহনা। এক হিন্দু যুবতীর জেহাদি হয়ে ওঠার কাহিনী যেন সিনেমাকেও হার মানায়। অবাস্তব মনে হলেও এমনটাই প্রকাশ্যে এসেছে বাংলাদেশ পুলিশের তদন্তে। কীভাবে হুগলীর এক তরুণী জঙ্গী সংগঠন নিও জেএমবির মহিলা শাখার প্রধান হয়ে ওঠে তা জানিয়েছেন সে দেশের গোয়েন্দারা।
গতকাল বা শুক্রবার, রাজধানী ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে ২৫ বছরের প্রজ্ঞা দাস ওরফে আয়েশা জান্নাত মোহনা ওরফে জান্নাতুল তাসনিমকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশ পুলিশের জঙ্গীদমন শাখা। পুলিশ জানিয়েছে, কুখ্যাত জঙ্গী সংগঠন নিও জেএমবির জন্য অনলাইনে সদস্য যোগাড় করত আয়েশা। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালে সংগঠনটির মহিলা শাখার প্রধান আসমা খাতুন গ্রেপ্তার হওয়ার পর সেই দায়িত্ব বর্তায় আয়েশার কাঁধে। তবে এটুকু হিমশৈলের চূড়া মাত্র। জঙ্গী দমন শাখার অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার শেখ ইমরান হোসেন জানিয়েছেন, ধৃত তরুণী ভারতের নাগরিক। তার বাড়ি হুগলী জেলার ধনিয়াখালি থানার অন্তর্গত কেশবপুর জেলায়। আদতে হিন্দু ওই তরুণী ২০০৯ সালে জেহাদিদের অনলাইন ফাঁদে পা দেয়। তার যোগাযোগ হয় নিও জেএমবির মহিলা শাখার প্রধান আসমা খাতুনের সঙ্গে। সে বছরই মগজ ধোলাইয়ের জেরে ইসলাম গ্রহণ করে প্রজ্ঞা দেবনাথ থেকে নাম পাল্টে সে হয়ে যায় আয়েশা জান্নাত মোহনা ওরফে জান্নাতুল তাসনিম।
প্রজ্ঞার বাবা প্রদীপ দেবনাথ দিনমজুর। কখনও কাজ থাকে, কখনও নয়। সেলাই করে সংসারের চাকাটা সচল রাখেন গীতা। এই অভাবের সংসারেও এক ছেলে ও এক মেয়ের পড়াশোনা যাতে কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে ছিল কড়া নজর। গীতা জানান, প্রজ্ঞা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দুটো পরীক্ষাই সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করেন। এরপর ধনিয়াখালি কলেজে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু তৃতীয় বর্ষের পড়া সম্পূর্ণ না করেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। শনিবার প্রতিবেশীরা সংবাদমাধ্যমে জেনে মেয়ের গ্রেফতারের খবর দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন ধনিয়াখালির বাসিন্দা গীতা দেবনাথ ও তাঁর স্বামী প্রদীপ দেবনাথ। মেয়ে দোষ করে থাকলে শাস্তি হোক, বললেন এ কথাও।
তদন্তে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে প্রথম বাংলাদেশ যায় প্রজ্ঞা ওরফে আয়েশা। তারপর থেকে বেশ কয়েকবার ভারত থেকে আসা যাওয়া কর সে। অবশেষে ২০১৯ সালে পাকাপাকিভাবে বাংলাদেশে ঠাতে শুরু করে সে। জাল বার্থ সার্টিফিকেট ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্রও যোগাড় করে সে। সন্দেহ এড়াতে, ওমানের এক বাংলাদেশি নাগরিককে অনলাইনে বিয়ে করে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য ভুয়ো কাগজপত্র তৈরি করে। ঢাকা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পাড় কেরানীগঞ্জ থানার একটি মাদ্রাসায় সে শিক্ষকতা শুরু করে। শিক্ষকতার আড়ালে অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রমে মহিলাদের রিক্রুট করত আয়েশা।জঙ্গী দমন শাখারর একজন অফিসার জানান, আয়েশা ভারতীয় নাগরিক। সনাতন ধর্মাবলম্বী এই যুবতী অনলাইনে জেএমবির কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট হয়ে ধর্মান্তরিত হয়। তার কাছ থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। সে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছিল। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল এলাকা থেকে জেএমবির মহিলা শাখার প্রধান আসমাকে জঙ্গী দমন শাখা গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকেই মহিলা শাখার দায়িত্ব সমলাচ্ছে আয়েশা।