করোনা সংক্রমণ রোধে সেই মার্চের শেষ থেকে দেশজুড়ে চলছে একটানা লকডাউন। যার ফলে পকেটে টান পড়েছে অনেক মানুষেরই। এই পরিস্থিতিতে লকডাউনে বিপর্যস্ত মানুষের কাছে সস্তায় টাটকা শাক-সব্জি এবং ফল পৌঁছে দিয়ে নজির গড়ছে সুফল বাংলা। সরাসরি গ্রামের কৃষকের থেকে সব্জি এনে শহরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ। বাজারদরের থেকে অনেক কমে সে-সব পাচ্ছেন মানুষ। করোনা আর লকডাউনের জাঁতাকলে যখন সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে, তখন তাঁদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা এই প্রকল্প।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা-আতঙ্ক দূরে সরিয়ে গত তিন মাসে রেকর্ড ব্যবসা করেছে সুফল। লকডাউন ঘোষণার আগে রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা স্টল থেকে রোজ গড়ে ৬-৭ লক্ষ টাকার সব্জি বিক্রি হত। সেটাই এখন হয়েছে ২০-২১ লক্ষ টাকা। লকডাউনের মধ্যে মোট প্রায় ২৫ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সুফল বাংলার স্টলের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। মার্চে ১৩৪টি জায়গায় স্টল ছিল। তার মধ্যে কিছু স্থায়ী, বাকিটা ভ্রাম্যমাণ। জুলাইয়ে স্টল বেড়ে হয়েছে ২৬৬টি। কলকাতা, হাওড়া, সল্টলেক এবং নিউ টাউনেই রয়েছে ২৩০টি স্টল। ২২টি স্থায়ী।
আনুমানিক প্রতিদিন দেড় থেকে দু’লক্ষ মানুষের কাছে কম দামে সব্জি পৌঁছে দিচ্ছে রাজ্য সরকারের অধীন এই কৃষি বিপণন সংস্থা। বিভাগীয় মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত জানান, লকডাউনে সুফল বাংলার স্টলে ক্রেতাদের ভিড় উত্তরোত্তর বেড়েছে। আগের চেয়ে বিক্রি তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে। সুফল বাংলার স্টল দেওয়ার জন্যও অনেকে আবেদন করছেন। কাউন্সিলর, বিধায়ক এবং আবাসনের বাসিন্দারা সুফল বাংলার গাড়ি পাঠানোর অনুরোধ করছেন। স্টলের সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে। অনেক জায়গায় শাক-সব্জির পাশাপাশি মাছও বিক্রি হচ্ছে।
সুফল বাংলার প্রকল্প অধিকর্তা গৌতম মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, শহরের বিভিন্ন বাজারে সব্জির যা দাম, সুফল বাংলায় তা মেলে অন্তত ১৫-২০ শতাংশ কম দামে। আলু-পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে সরকার থেকে বিশেষ ভর্তুকিতে সে সব বিক্রি করা হয়। কয়েক মাস আগে বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা কিলো হয়েছিল। তখন সুফল বাংলায় দর ছিল ৪৯ টাকা। এই সব স্টল চালায় মূলত ফারমার্স প্রডিউসার কোম্পানিগুলি। তারা সরাসরি মাঠ থেকে সব্জি কিনে এনে বিক্রি করায় দাম কম পড়ে। জিনিসপত্রের দাম রোজ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। প্রতিটি স্টলেও তালিকা থাকে। স্বয়ংক্রিয় মেশিনে মালপত্র ওজনের পর ক্রেতাদের স্লিপ দেওয়া হয়। তাই ঠকবারও ভয় নেই।