ভারতের উপর চাপ বাড়াতে এ বার ভুটানের ভূখণ্ডও নিজেদের বলে দাবি করল চীন৷ বলা ভাল, দিল্লীর বন্ধু বলে পরিচিত থিম্পুকেও নেপালের মতো নিজেদের দলে টানতে চীন এই চাল দিয়েছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল৷ ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়ে বেজিং জানিয়েছে, ভুটানের পূর্ব, মধ্য এবং পশ্চিম অংশে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের সঙ্গে বিবাদ রয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ভারতের নাম না নিয়েই দিল্লীকে নিশানা করে চীন রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে ভুটানের বিবাদে যেন কোনও তৃতীয়পক্ষ হস্তক্ষেপের চেষ্টা না করে৷
সাকতেং অভয়ারণ্যের জন্য অনুদান পেতে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটিতে আবেদন জানিয়েছিল ভুটান৷ কিন্তু ভুটানের এই আবেদন নিয়ে আপত্তি জানায় চীন৷ তাদের দাবি, ওই এলাকা নিয়ে বিবাদ রয়েছে৷ ফলে তা নিজেদের বলে দাবি করতে পারে না ভুটান৷ চীনের আপত্তি সত্ত্বেও ভুটান ওই অনুদান পেয়েছে৷ পাশাপাশি, নয়াদিল্লীতে অবস্থিত চীনা দূতাবাসকে ভুটানের তরফে কড়া বার্তা দিয়ে জানানো হয়েছে সাকতেং অভয়ারণ্যের গোটাটাই তাদের ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷
সাকতেং অভয়ারণ্য ভুটানের ত্রাসিগাং প্রদেশে অবস্থিত৷ চীনের এই কৌশল আসলে দিল্লীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার জন্য ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির উপরে বেজিংয়ের রাগের বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করা হচ্ছে৷
২০১৭ সালে ভুটানের অন্তর্গত ডোকলামে ঢুকে পড়েছিল চীনা সেনা৷ সেখানে রাস্তা নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করে তারা৷ পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে ভারতীয় সেনাও৷ ৭২ দিন ধরে দু’ তরফে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত স্থিতাবস্থা ফেরানো সম্ভব হয়৷ এ বারেও বেশ কিছুদিন ধরেই শিলিগুড়ি করিডরের উপর নজর রাখার জন্য ভুটানে তোর্সা নদীর সমান্তরাল একটি রাস্তা তৈরির কাজ চীন শুরু করেছে বলে খবর৷
আসলে প্রতিবেশী ছোট ছোট দেশগুলির সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ নিয়ে করা সমস্ত চুক্তিই নিজেদের শর্ত অনুযায়ী করেছে চীন৷ ভুটানি সংবাদপত্র ‘দ্য ভুটানিজ’-এর সম্পাদক তেনজিং লামসাং টুইটারে দাবি করেছেন, পূর্ব ভুটানে চীনের সঙ্গে তাঁদের কোনও বিবাদই নেই৷ তিনি লিখেছেন, ‘১৯৮৪ সাল থেকে চীনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে ২৪টি বৈঠকে শুধুমাত্র দু’টো এলাকা নিয়েই বিবাদের নিষ্পত্তি হয়নি৷ তার মধ্যে ভুটানের পশ্চিম অংশে ২৬৯ বর্গ কিলোমিটার এবং উত্তরমধ্য ভুটানের ৪৯৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে৷ প্রতিটি বৈঠকের সিদ্ধান্তেই দু’পক্ষ সই করেছে৷ কোনও বৈঠকেই ভুটানের পূর্ব অংশ নিয়ে কোনও দাবি তোলেনি চীন৷ ফলে পূর্ব ভুটানে চিনের সঙ্গে কোনও সীমান্ত বিবাদ থাকতে পারে না বলেই দাবি করেছেন ভুটানের ওই সংবাদপত্রের সম্পাদক৷