নির্ধারিত সময়ের পরেও দোকান খুলে রেখেছিলেন। এই ছিল তাঁদের অপরাধ। আর তার শাস্তি হিসেবেই তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে পুলিশের মারে প্রাণ খুইয়ে ফেলতে হয় এক ব্যবসায়ী ও তাঁর ছেলেকে। যা নিয়ে এখনও উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। এরই মধ্যে ফের পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে অত্যাচারে মৃত্যুর অভিযোগ তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে। ব্যবসায়ী পি জয়রাজ ও তাঁর ছেলে জে বেনিক্সের মৃত্যুর ঘটনার পর এবার পুলিশি অত্যাচারে মৃত্যু হল সে রাজ্যের আর এক যুবকের। অভিযোগের তির, সেই একই সাব-ইনস্পেক্টর ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে, যাঁরা জয়রাজদের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ২৩ মে গভীর রাতে ২৮ বছরের যুবক মহেন্দ্রনকে তাঁর দিদিমার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান সান্থনকুলমের এলাকার থানার সাব-ইনস্পেক্টর রঘু গণেশ ও তাঁর দলের লোকেরা। মহেন্দ্রনের অপরাধ? একটি খুনের মামলায় পুলিশ তাঁর দাদা দুরাইকে খুঁজছিল। দুরাইয়ের খোঁজ পেতেই নাকি তাঁর ভাইকে থানায় নিয়ে যান রঘু ও তাঁর দলবল। মহেন্দ্রনকে এক রাত থানায় রেখে পরের দিন ছেড়েও দেওয়া হয়। তবে থানা থেকে ফেরার পর হাঁটতে পারছিলেন না তিনি। ক্রমশ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এর পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় মহেন্দ্রনের। ময়নাতদন্ত না হলেও হাসপাতালের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। গোটা ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়ে মাদ্রাজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মহেন্দ্রনের মা।
পেশায় দিনমজুর মহেন্দ্রনের এক আত্মীয় পেরুমলের অভিযোগ, কোনও রকম ওয়ারেন্ট ছাড়াই ওই যুবককে থানায় নিয়ে যায় রঘু গণেশরা। তাঁর কথায়, ‘সে দিন রাতে গাড়ির সামনে-পিছনের নম্বর প্লেট খুলে ঘরে ঢুকেছিলেন রঘু গণেশ। হাতে পিস্তলও ছিল।’ ২৪ মে রাতে থানা থেকে ছাড়া পেলেও মহেন্দ্রনের বাঁ-হাত ও পা অসাড় হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি পেরুমলের। মহেন্দ্রনের মা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের পুলিশ এতটাই অত্যাচার করেছিল যে ঠিক মতো জলও খেতে পারছিল না সে। মহেন্দ্রনের মা বলেন, ‘বারবার জানতে চাইছিলাম, কী হয়েছে? কিন্তু প্রতি বারই মহেন্দ্রন চুপ করে থাকত। এক রকম জোর করেই ওঁর দিদার বাড়ি থেকে মহেন্দ্রনকে নিয়ে এসেছিসাম।’
মহেন্দ্রনের মায়ের দাবি, পুলিশ তাঁর ছেলেকে থানায় নিয়ে গেলেও, সে নির্দোষ। কোনও রকমের অপরাধেও জড়িত ছিল না। এ ভাবেই সপ্তাহ দুয়েক কাটানোর পর মহেন্দ্রনকে স্থানীয় এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর কথায়, ‘’আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, মহেন্দ্রন ভাল নেই। জলটুকুও খেতে পারত না। তুতিকোরিনের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার ভর্তি করানো হয়। আর শনিবার মারা যায় মহেন্দ্রন। হাসপাতালে স্ক্যান করা হয়েছিল। সেখান থেকে জানিয়েছিল, ছেলের মাথায় হঠাৎই রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে।’
তবে হাসপাতালের তরফে ময়নাতদন্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। মহেন্দ্রনের মা বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম ময়নাতদন্ত করা হোক। তবে অনেক করোনা-রোগীর চিকিৎসা চলছে বলে হাসপাতাল থেকে ছেলের দেহ সরিয়ে নিয়ে যেতে বলেছিল। তাই ছেলের দেহ নিয়ে চলে আসি।’ পুলিশি হেফাজতে ছেলের মৃত্যুর পর অবশ্য চুপ করে বসে থাকেননি মহেন্দ্রনের মা। ২০ জুন গ্রাম সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে তুতিকোরিনের পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তবে সেখানে তাঁদের কোনও কথায় আমল দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এর পর তুতিকোরিনের জেলাশাসকের সঙ্গেও দেখা করতে যান তাঁরা। সেখানেও একই অভিজ্ঞতা। জেলাশাসক তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি বলে অভিযোগ। হতাশ না হয়ে এর পর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মহেন্দ্রনের পরিবার।