করোনার জেরে স্তব্ধ হয়েছিল ক্রীড়াদুনিয়া। এখন যদিও আস্তে আস্তে সেই স্তব্ধতা কাটছে। কিন্তু অতিমারির ধাক্কায় এই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে আছে রাজ্যের জিমন্যাস্টিক্স। বন্ধ আছে বাংলার বিভিন্ন জেলার এবং ক্লাবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। যা বঙ্গ জিমন্যাস্টিক্সের প্রাণকেন্দ্র বলেই ধরা হয়ে থাকে। জিমন্যাস্টদের ধারণা, তাঁরা লড়াই থেকে ক্রমে পিছিয়ে পড়ছেন।
এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম সেরা জিমন্যাস্ট মেদিনীপুরের প্রণতি নায়েক। যিনি আটকে রয়েছেন সুদূর পিংলা গ্রামে। যেখানে জিমন্যাস্টিক্স ক্লাবের কোনও অস্তিত্বই নেই। দু’টো গাছের মাথায় বাঁশ বেঁধে চলছে তাঁর ট্রেনিং। দু’বছর আগে এশিয়ান গেমসে ভারতকে ফাইনালে তোলা সেই মেয়েই বলছেন, “আমার অলিম্পিক্সে যাওয়ার একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের জেরে প্র্যাক্টিসই করতে পারছি না। পিছিয়ে পড়ছি লড়াই থেকে। আমি বিশ্বেশ্বর নন্দী স্যরের কাছে, সাইয়ের ম্যাডামের কাছে অনলাইন ট্রেনিং নিচ্ছি। কোনও সমস্যা হলে দীপাদির (দীপা কর্মকার) সঙ্গে কথা বলি। জয়প্রকাশ (চক্রবর্তী) স্যরের কাছেও ক্লাস করি।’’
কলকাতা সাই এই মুহূর্তে বন্ধ। ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই বাড়িতে। সাইয়ের কোচ পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘বিশাল ধাক্কা খেয়েছি আমরা। এখন শুধু সাইয়ের অনলাইন কোচিং ক্লাসই ভরসা। জিমন্যাস্টিক্সে যে-হেতু খুদে বাচ্চাদের প্রাধান্য দিতেই হয়, তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের আবার ঠিক রাস্তায় আনাটা যে বেশ কঠিন কাজ হবে”।
করোনা যদি বঙ্গ জিমন্যাস্টিক্সকে এই মুহূর্তে ধাক্কা দিয়ে থাকে, তা হলে আর একটা বড় সমস্যা হল পরিকাঠামো। সঠিক পরিকাঠামো তৈরি করতে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার খরচ। আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সে (যেটা দীপা কর্মকারের ইভেন্ট) ‘ফোম পিট’-এর খুব প্রয়োজন। তা বানাতেই খরচ প্রায় ৪৫-৫০ লাখ টাকা।
মেয়েদের জাতীয় দলের অন্যতম কোচ এবং প্রণতি নায়েককে তুলে আনার পিছনে যাঁর সব চেয়ে বড় হাত, সেই মিনারা বেগমের মন্তব্য, ‘‘ধাক্কা তো খেলামই, কিন্তু আমাদের এই মুহূর্তে কিছু করারও নেই। এ ভাবেই চলতে হবে”।