কথায় আছে, একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর। ঠিক একই হাল এখন ভারতীয় অর্থনীতির। একে তো নোটবন্দী, জিএসটির পরে অর্থনীতির ঝিমুনি তো ছিলই। মন্দার কোপেও ভুগছিল বাজার। এখন গোদের ওপর বিষফোঁড়ার সামিল হয়েছে করোনা ও তার জেরে চলা লকডাউন। আর এই জোড়া ফলায় কার্যত বিপর্যস্ত গোটা ভারতীয় অর্থনীতি। যার ফলে আগামী কয়েক মাসে করোনা ভাইরাস জনিত পরিস্থিতিতে দেশের রিটেল ব্যবসার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬০ লক্ষ মানুষ কর্মচ্যুত হবেন। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দ্য রিটেলারস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (আরএআই)।
খোদ সংস্থার সিইও কুমার রাজাগোপালন একথা জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এই ৬০ লক্ষ কর্মচারীর প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ করেন আধুনিক রিটেল ব্যবসায়। যদি সরকার এই মুহূর্তে বিষয়টির দিকে নজর না দেয় তাহলে আগামী চার মাসের মধ্যে এঁরা কাজ হারাবেন। এই প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে করা এক সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান – বড় রিটেলাররা কমপক্ষে ২০ শতাংশ কর্মী সংখ্যা কমাবে। ছোটো রিটেলারদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩০ শতাংশে। মূলত ফ্যাশন, লাইফস্টাইল, পর্যটন, যন্ত্রাংশ, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, বিনোদন কেন্দ্রে সবথেকে বেশি কর্মী ছাঁটাই হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মার্চ মাসে অনত্যাবশ্যকীয় পণ্যের রিটেলারদের ব্যবসা কমেছিলো ৫০ শতাংশ। যেখানে মে মাসে এই হার গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ শতাংশে। আবার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের রিটেলারদের ব্যবসায় এপ্রিল মাসে ঘাটতি হয়েছিল ৪০ শতাংশ। যা মে মাসে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে। এই মুহূর্তে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রিটেলার চরম আর্থিক সংকটে আছে এবং টাকার জোগান না পেলে এঁদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। আরএআই আরও জানিয়েছে, সম্প্রতি ৩০০ রিটেলারের ওপর এক সমীক্ষা চালানো হয়েছিলো। সেই সমীক্ষায় অধিকাংশ রিটেলার জানিয়েছেন কোভিড জনিত পরিস্থিতি থেকে ব্যবসা বাঁচাতে তারা ব্যাঙ্কের কাছ থেকে কোনও রকম আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে, সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির (সিএমআইই) তথ্য অনুসারে গত মে মাসের ৩ তারিখে শেষ হওয়া সপ্তাহের হিসেব অনুসারে দেশে বেকারত্ব বেড়েছে ২৭.১১ শতাংশ। যার মধ্যে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের সংখ্যা বেশি। শহরের হার যেখানে ২৯.২২ শতাংশ সেখানে গ্রামীণ ক্ষেত্রে এই হার ২৬.৬৯ শতাংশ। ওই রিপোর্টেই জানানো হয়েছে গত এপ্রিল মাসের শেষে সর্বাধিক বেকারত্বের হার ছিলো পুদুচেরীতে (৭৫.৮ শতাংশ) এরপর তালিকায় আছে তামিলনাড়ু (৪৯.৮ শতাংশ), ঝাড়খন্ড (৪৭.১ শতাংশ), বিহার (৪৬.৬ শতাংশ), হরিয়ানা (৪৩.২ শতাংশ), কর্ণাটক (২৯.৮%), উত্তরপ্রদেশ (২১.৫ শতাংশ) ও মহারাষ্ট্র (২০.৯ শতাংশ)।