বর্তমানে গোটা রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে বিভিন্ন জটিল অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা হয়েছে। আর এরমধ্যেই নজির গড়ল আর এন টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্স। জানা গেছে, প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ছয় মাসের একরত্তি শিশুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আর এন টেগোর হাসপাতালে। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাকে ভরতি করে নেওয়া হয় সেখানে।
এরপরেই শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, সে নিউমোনিয়ার শিকার হয়েছে। এরপর চলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সেখানে দেখা যায় শিশুর হৃদপিণ্ডে এক জন্মগত জটিল সমস্যা রয়েছে। হৃদপিণ্ডের মহাধমনী ও শিরার মাঝখানে এক বাড়তি পাইপের সংযোগের ফলেই শিশুটির সমস্যা দেখা গিয়েছে। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসিস বা পিডিএ।
শিশুটির অবস্থা স্থিতিশীল করতে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন ও নিউমোনিয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ও হার্ট ফেলিওরের ওষুধ দেওয়া হয়। এর পর সুস্থ হয়ে গেলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে, হার্টের সমস্যা সম্পূর্ণ ভাবে সারানোর জন্য বিশেষ চিকিৎসা করা হবে বলে জানায় হাসপাতাল। কিন্তু ততদিনে করোনার থাবা চওড়া হয়ে গিয়েছে। দেশেও শুরু হয়ে যায় লকডাউন। এই অবস্থায় ওই একরত্তিকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয়নি বাবা-মার। ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছে তিন মাস।
এর পর শিশুটির আবারও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তারপরই তাঁর বাবা-মা আর এন টেগোর হাসপাতালের অনলাইন কনসালটেশনের সাহায্যে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক মহুয়া রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হার্টের ওষুধের মাত্রার পরিবর্তন করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি। এর পর তিনি শিশুটিকে দেখে বুঝতে পারেন ওষুধের সাহায্যে বিশেষ কোনও কাজ হবে না। অবিলম্বে সঠিক চিকিৎসায় পিডিএ-র সমস্যা না সারালে বড় ধরণের অঘটনের ঝুঁকি আছে। পিডিএ সারানোর জন্য দুভাবে চিকিৎসা করা হয়।
এক, বুক কেটে অস্ত্রোপচার করে পিডিএ বন্ধ করে দিতে হবে, নতুবা বিশেষ ডিভাইসের সাহায্যে বুক না কেটে কুঁচকি থেকে ইন্টারভেনশনাল পদ্ধতির সাহায্যে পিডিএ ক্লোজ করতে হবে। শিশুটির পিডিএ বেশ বড় ছিল (৫ মিমি) তাই ওর বৃদ্ধিও ঠিক মত হয়নি, ওজন মোটে ছয় কেজি। এদিকে বারংবার সংক্রমণের জন্য দু্র্বলও হয়ে পড়ছিল সে। এই করোনা পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে হাসপাতালে ভরতি করার ব্যপারে বাবা-মা দোলাচালে ছিলেন। কিন্তু দ্রুত পিডিএ ক্লোজার না করা হলে ওর সমস্যা গুরুতর হতে পারে। তাই সব দিক বিবেচনা করে তাকে ভরতি করে নেওয়া হয়।
এরপর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর শিশুটির পেটেন্ট ডাকটাস আর্টেরিওসিস ডিভাইস ক্লোজার করা হল। মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই শিশুটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। ওপেন হার্ট সার্জারি করা হলে সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে, রক্তপাত হয় বলে। কিন্তু ডিভাইস ক্লোজারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম রক্ত বেরোয় তাই রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
এই ব্যাপারে আরএন টেগোরের অধিকারিক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “যে সব শিশুর জন্মগত হার্টের সমস্যা আছে, করোনার ভয়ে তাঁদের চিকিৎসা বন্ধ না রাখাই শ্রেয়। হার্টের সমস্যা ফেলে রাখলে আচমকা বিপদের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভাল। চিকিৎসক যদি অস্ত্রোপচার বা ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিতে বলেন তবে অকারণ দেরি করে বাচ্চার বিপদ বাড়াবেন না।”