গত ১৫ জুন রাতে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনা সেনার সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহীদ হন। আহত হন আরও ৭৬ জন। সেদিনের সংঘর্ষের পর থেকেই গোটা দেশ চীনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে। দেশজুড়ে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে চীন থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সীমান্ত শুল্ক দফতর বিধিনিষেধ আটোসাঁটো করতেই দেশের বাজারে এলইডি বাল্ব, ফিটিংস ও বিভিন্ন ধরনের পাখার দাম ১০-২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। ভারতের বাজারে চীনা বৈদ্যুতিক পণ্যের সরাসরি আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে দাম আরও ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এলইডি বাল্ব ও ফিটিংসের দাম সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখতে কেন্দ্রের কাছে তাঁদের আর্জি, ভারতে উৎপাদনের ক্ষেত্রে চীনা উপকরণের আমদানির উপর যেন কোনও রকম সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি না করা হয়।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে এলইডি বাল্ব, ফিটিংসের বিক্রি সবথেকে বেশি এবং গত কয়েক বছর ধরে তা ৫০ শতাংশের বেশি চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্র ধরে রাজ্যে শুধু এলইডি বাল্ব ও নানাবিধ ফিটিংসের বাজার বছরে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার। বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থা ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্যুইচ গিয়ার অ্যান্ড কেবলস-এর মালিক আশিস আগরওয়ালের কথায়, ‘ভারতে বিভিন্ন উৎপাদনকারী সংস্থা খরচ বাঁচাতে ও বেশি মুনাফা করতে তাদের মোট বিক্রির ৩৫-৪০ শতাংশ সরাসরি চীন থেকে আমদানি করে তা মেড ইন স্ট্যাম্প লাগিয়ে বিক্রি করছিল। এখন চীনা পণ্য বয়কটের জিগিরে গত ৮-১০ দিন হল সেটা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে, বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ হঠাৎ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষকে কম দামে এলইডি বাল্ব দিতে সরকার বিভিন্ন সংস্থাকে যে বরাত দেয়, সেখানেও বাল্বের সর্বনিম্ন দর বাড়তে পারে।’
শুধু এলইডি বাল্ব ও ফিটিংসই নয়, বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ভারতের তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে অনেক নামকরা ব্র্যান্ডই বিভিন্ন ধরনের পাখা চীন থেকে সরাসরি আমদানি করে। কলকাতায় একাধিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদনকারী সংস্থার ডিস্ট্রিবিউটর কমল চাঁদগোঠিয়া বলেন, ‘চীনে উৎপাদিত পেডেস্টাল, ওয়াল ও কেবিন পাখা তৈরির খরচ ভারতের তুলনায় ৪০-৫০ শতাংশ কম। তাই অনেক সংস্থাই ভারতে তাদের কারখানা থাকলেও ৩৫-৪০ শতাংশ সরাসরি চীন থেকে তৈরি করিয়ে এখানে নিয়ে এসে বিক্রি করে। গত দেড় মাস হল কোনও জিনিস আসছে না। ফলে, পাখার দাম ১০ শতাংশের বেশি বেড়ে গিয়েছে।’ এলইডি বাল্ব ও ফিটিংস ক্ষেত্রে রশ্মি ব্র্যান্ডের মালিক সংস্থা ধনশ্রী ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের সিইও অভিষেক তোশনিওয়ালের বক্তব্য, এলইডি বাল্ব ও ফিটিংসের ক্ষেত্রে চিপ, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) ক্যাপাসিটারের মতো বৈদ্যুতিন উপকরণ ভারতে উৎপাদিত হয় না, পুরোটাই আমদানি করতে হয়।
তিনি বলেন, ‘ভারতে হাউজিং, মেটাল পার্টস, পিসিবি উৎপাদিত হলেও পিসিবি তৈরির উপাদান আবার চিন থেকে আসে। আমরা এখন এলইডি বাল্ব ও ফিটিংস তৈরির জন্য ৩০-৩৫ শতাংশ উপাদান চিন থেকে আমদানি করে ভারতে আমাদের কারখানায় অ্যাসেম্বল করি। চিন থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে আগামী ৬ মাসে দাম আরও ২০-২৫ শতাংশ বাড়তে পারে।’ ব্যবসায়ীমহলের বক্তব্য, সরকারের উচিত চিনা উপকরণ আমদানিতে ছাড় দেওয়া। অভিষেকের মন্তব্য, ‘সেমি-কন্ডাক্টর তৈরির জন্য আমাদের দেশে কোনও বাণিজ্যিক ফ্যাব্রিকেশন ইউনিট নেই। চীনের সরকার যেমন সেখানকার প্রত্যেক বড় এলইডি বাল্ব উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ করেছে, ভারত সরকারেরও উচিত তা অনুসরণ করা। সে ক্ষেত্রে ফ্যাব্রিকেশন ইউনিট গড়ে তুলতে যে কয়েক হাজার কোটি টাকা লগ্নী প্রয়োজন, তাতে বেসরকারি সংস্থাকে আর্থিক সহায়তা দিতে পারবে কেন্দ্র।’