করোনা সংক্রমণ রোধে তড়িঘড়ি দেশজুড়ে লাগু করে দেওয়া হয়েছিল লকডাউন। আর তার জেরেই তাঁরা আটকে পড়েছিলেন ভিনরাজ্যের কর্মক্ষেত্রে। খাওয়াদাওয়া আর রোজকার খরচে সব সঞ্চয় শেষ হয়ে যাওয়ায় আশঙ্কায় ছিলেন যে বাড়ি ফিরে কী হবে! অবশ্য শুনেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাড়ি ফেরার পর পরিযায়ীদের দক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। তা যে কথার কথা নয়, তার প্রমাণ মিলল কেতুগ্রামের আরনা, কুচুটিয়া-সহ বিভিন্ন গ্রামে।
এখানকার হাজারের ওপর বাসিন্দা মুম্বই, দিল্লী, চেন্নাই, রাজস্থান, হরিয়ানা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে নির্মাণ শিল্প, অলঙ্কার শিল্প, রেস্তোরাঁয়, বই বাঁধাইয়ের কাজে, শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। লকডাউন ঘোষণা হতেই মালিকরা দু’চারদিন বাদেই হাত গুটিয়ে নেন। বাড়তি দুটো পয়সা রোজগার করতে গিয়ে তখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ দশা হয় সকলের। ‘কীভাবে বাড়ি ফিরব, সেই চিন্তার থেকেও বেশি দুশ্চিন্তা ছিল বাড়ি ফিরে সংসার চালাব কীভাবে?’ এমনটাই বলছিলেন কেতুগ্রামের আগড়ডাঙা পঞ্চায়েতের মুজিবর রহমান, চাঁদ বক্কর, আয়ুব হোসেনরা। কিন্তু বাড়ি ফিরেই ১০০ দিনের কাজ পেয়ে চিন্তা মুক্ত তাঁরা।
পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, আগড়ডাঙা পঞ্চায়েতের ১১টি গ্রামের ৩১২ জন বাসিন্দা ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে ২৬০ জন ১০০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করার আবেদন জানান। তাঁদের সকলকেই জবকার্ড দেওয়া হয়েছে ও কাজে লাগানো হয়েছে জানিয়ে উপপ্রধান শহিদুল ইসলাম বললেন, ‘রাজ্য সরকার বলেছে ১০০ দিনের কাজে পরিযায়ীদের অগ্রাধিকার দিতে। সেই নির্দেশ পালন করেছি।’ কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘এই প্রকল্পে সেচ খাল সংস্কার, কৃষি নালা সংস্কার, গাছ লাগানোর কাজে বেশি করে ভিনরাজ্য ফেরতদের লাগানো হচ্ছে।’
কাজের সুযোগ পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ভিনরাজ্য ফেরত শুকুর শেখ, আয়ুব শেখরা। তাঁরা বলেন, ‘দুটো বাড়তি পয়সা রোজগারের জন্য ভিনরাজ্যে গিয়েছিলাম। লকডাউনে সব রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে কাজ না পেলে বউ-বাচ্চা নিয়ে ভেসে যেতাম। ভাগ্যিস মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কথা ভেবেছেন!’ উল্লেখ্য, শুধু আগড়ডাঙা পঞ্চায়েতেই নয়, কেতুগ্রামের দুটি ব্লকেই পরিযায়ীদের কাজে লাগাতে ১০০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্পে বিভিন্ন সরকারি দফতরের সমন্বয়ে বহুমুখী প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সেইজন্য প্রাথমিকভাবে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এই প্রকল্পে পুকুর খনন করে মাছ চাষ ও পুকুরের পাশে হাঁস প্রতিপালন, ডিম উৎপাদন, নার্সারি, জৈব সার উৎপাদন ইত্যাদি শুরু হয়েছে।