করোনার ধাক্কায় ভারত তো বটেই, বেসামাল গোটা বিশ্ব অর্থনীতিই। তবে এই পরিস্থিতিতেও এগিয়ে বাংলা। হ্যাঁ, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে দু’দুটি কারখানা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতারই সংস্থা টিবিএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্টস। লগ্নী সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে প্রায় ৫০০ নয়া কর্মসংস্থান সৃষ্টির উজ্জ্বল সম্ভাবনা। সবথেকে বড় কথা, উৎপাদিত ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের ৯০ শতাংশই রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে টিবিএল। গত ২৫ বছর ধরে সংস্থাটি মূলত সিমেন্ট, লৌহ ও ইস্পাত, কাগজ শিল্পের মতো বিভিন্ন ম্যানুফাকচারিং ক্ষেত্রের কারখানায় প্রয়োজনীয় ইঞ্জিনিয়ারিং মেশিনারি সরবরাহ করে আসছে।
টিবিএল ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাহের মহম্মদ ফইজুল্লাভয়ের কথায়, ‘আমাদের মূল ব্যবসা হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেডিং ও এক্সপোর্ট। আমরা অন্যান্য রাজ্যের বিভিন্ন কারখানায় জবওয়ার্কের মাধ্যমে মেশিনারি উৎপাদন করে রপ্তানি করি। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই সমস্ত জবওয়ার্কের বদলে নিজেদের কারখানা গড়ে তুলে সেখানেই সমস্ত কিছু উৎপাদন করব। আর যেহেতু আমি পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপূত্র, তাই কলকাতা ও তার আশেপাশে কারখানা ও গুদামঘর গড়ে তুলব। সব মিলিয়ে জমি সহ ২ কোটি টাকার মতো লগ্নি করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজ্যের অর্থ ও শিল্পবাণিজ্য মন্ত্রী অমিত মিত্রও জানিয়েছেন, ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি যেখানে অত্যন্ত খারাপ, সেখানে আর্থিক পর্যায়ে করোনার কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার মোকাবিলায় রাজ্যের সম্ভাবনা অনেকটাই ভাল। আর এমএসএমই ক্ষেত্রের হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে বলে প্রবল আশাবাদী রাজ্য সরকার। এদিকে রাজ্যে প্রস্তাবিত ওই কারখানায় মূলত হাইড্রলিক পাওয়ার প্যাক, হাইড্রলিক সিলিন্ডার উৎপাদন ও গিয়ার বক্স অ্যাসেম্বলিং করার পরিকল্পনা করেছে টিবিএল।
কারখানা গড়ে তোলার জন্য সংস্থাটি ২,০০০ বর্গফুটের মতো জমি খুঁজছে হাওড়ার জঙ্গলপুর ও কলকাতার তপসিয়া অঞ্চলে। প্রস্তাবিত কারখানায় প্রাথমিক ভাবে বছরে উৎপাদন হবে ২ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য, যার ৯০ শতাংশই সার্ক ও আসিয়ান ভুক্ত দেশগুলির পাশাপাশি মধ্য প্রাচ্যে রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে টিবিএল। বাকি ১০ শতাংশ পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প সংস্থার কল-কারখানায় সরাসরি বিক্রির পরিকল্পনা করেছেন তাহের।
কিন্তু, যেখানে করোনা পরিস্থিতির কারণে শিল্প, বাণিজ্য তো বটেই সামগ্রিক ভাবে ভারত সহ অনেক দেশের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা, সেখানে টিবিএল-এর এই উলট পুরাণ কেন? তাহেরের জবাব, ‘প্রথমত, আমাদের নিজেদের কারখানা গড়ে উঠলে ১৫-২০ শতাংশ উৎপাদন খরচ কমবে। দ্বিতীয়ত, করোনা আমাদের নতুন করে ভাবার সময় দিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্থির করার দিশা দিয়েছে। তাই আমরা এবার আমাদের চিরাচরিত ব্যবসা ক্ষেত্রের পাশাপাশি স্টিল, স্টেইনলেস পাইপ ও স্কাফহোল্ডিং পাইপ উৎপাদন করার জন্য যৌথ উদ্যোগে বাংলায় নয়া টিউব প্ল্যান্ট গড়তে চলেছি। এই ব্যবসায় আমরা প্রথম আসছি।’
এই উদ্দেশ্যে হাওড়ার সলপে প্রায় ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নয়া কারখানা গড়ে তোলার কাজ আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার ছয় মাস পর থেকেই উৎপাদন চালু হয়ে যাবে বলে তাহের জানিয়েছেন। শুধুমাত্র এই কারখানাতে প্রায় ৩০০-র বেশি নয়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সলপে যে টিউব প্ল্যান্ট গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে বছরে ১৮০০০ টন পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে এ ধরনের পাইপের টন প্রতি গড় দাম ৩০০০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে সলপের কারখানাতে বছরে ৫৪ কোটি টাকার উৎপাদন করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের মত।