সম্প্ৰতি করোনা মোকাবিলায় যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, করোনা মোকাবিলায় আমেরিকার চেয়েও ভাল কাজ করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতে কাজের সন্ধানে অন্যত্র যেতে না হয় তার জন্য ‘আত্মনির্ভর উত্তরপ্রদেশ রোজগার অভিযান’ প্রকল্পেরও উদ্বোধনও করেন তিনি। বলা হয়, এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের ১ কোটি ২৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ির কাছেই কাজের সুযোগ পাবেন। কিন্তু ঘোষণাই সার! তাঁর এই ঘোষণার দু’দিনের মাথাতেই কাজের সন্ধানে ফের ভিনরাজ্যের উদ্দেশে রওনা দিতে শুরু করলেন যোগীরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁদের কথায়, ‘‘অনাহারে মরার চেয়ে করোনা ঢের ভাল।’’
গত ২৪ মার্চ দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক উত্তরপ্রদেশে ফিরে এসেছিলেন। এবার আনলক পর্ব শুরু হতেই ফের তাঁদের একটা বড় অংশ এখন দলে দলে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে শুরু করেছেন। এই মুহূর্তে গোরক্ষপুর জংশন থেকে মহারাষ্ট্র, গুজরাত সহ অন্যান্য রাজ্যে হাতে গোনা কিছু ট্রেন চলছে। তাতে চেপেই কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দিতে শুরু করেছেন যোগীরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা। গোরক্ষপুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে দেওরিয়া বাসস্ট্যান্ডে তাই সকাল থেকেই লাইন দিচ্ছেন তাঁরা। দেওরিয়া থেকে বাসে চেপে প্রথমে গোরক্ষপুর, তার পর সেখান থেকে গন্তব্যে রওনা দেওয়াই উদ্দেশ্য তাঁদের।
তবে ফিরে গেলেই যে কাজে ফিরতে পারবেন, তেমন সম্ভাবনা নেই। কারণ করোনা আতঙ্কে এখনও বহু কল-কারখানা বন্ধ রয়েছে। তবু আগে-ভাগে পৌঁছতে পারলে কিছু একটা বন্দোবস্ত হয়ে যাবে বলে আশাবাদী ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁদের মধ্যে থেকে খুরশিদ আনসারি নামের এক জন মুম্বইয়ে কাপড়ের কারখানায় কাজ করেন। এক মাস আগেই বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় সংসার চালাতে সমস্যায় পড়েছেন। তাই বেরিয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি। খুরশিদ আনসারি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে কাজের সুযোগ থাকলে ফিরে যেতাম না। এখানে কিচ্ছু নেই আমাদের জন্য। তাই ভিনরাজ্যে যদি কিছু পাওয়া যায়, তার জন্যই যাচ্ছি। না খেতে পেয়ে মরার চেয়ে করোনা ঢের ভাল। আমি করোনায় মরলে দুঃখ নেই। ছেলেমেয়েগুলো যেন বাঁচে।’’