আর্থিক সংস্কার কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে এ বার ধীরে ধীরে গ্যাসের দাম বিনিয়ন্ত্রণের পথে নরেন্দ্র মোদী সরকার। শুক্রবার এমনই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তাঁর মতে, এর ফলে বিদেশি লগ্নি আকৃষ্ট হবে। যার হাত ধরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।
২০১০ সালের জুন মাসে পেট্রোলের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে ইউপিএ সরকার। সেই পথ ধরে ২০১৪ সালে এনডিএ ক্ষমতায় আসার পরপরই ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণ করেছিল। যার পরে বিশ্ব বাজারের ওঠা-পড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তেল সংস্থাগুলি দৈনিক ভিত্তিতে এর দাম ঠিক করে। দামের এই ওঠাপড়ার উপরে সরকারের কোনও প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই বলেই দাবি করা হয়। সেই পথ ধরে এ বার পালা প্রাকৃতিক গ্যাসের। বর্তমানে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে। প্রতি মাসে গ্যাসের মূল্য নির্ধারিত হয়। সেই নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে চায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
এ দিন নয়াদিল্লীতে বিএনইএফ শীর্ষসম্মেলনে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বলেন, ‘ভারতে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ এবং বিপণনের স্বাধীনতা আমরা দিতে চলেছি। ফলে তাঁদের প্রতি আমাদের আবেদন, এই সুযোগ নিতে লগ্নিকারীরা আরও বেশি করে উৎপাদন করুন এবং লগ্নি করুন।’
মূল্য বিনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেশে জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার আরও বাড়ানোর উপরেও জোর দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বর্তমানে যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার হয় তার মধ্যে মাত্র ৬.২ শতাংশ গ্যাস। এই অংশিদারিত্ব বাড়িয়ে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। এর মূল কারণ হল দূষণ নিয়ন্ত্রণ। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের নিরিখে সারা বিশ্বে ভারত সামনের সারিতে। জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার আরও বাড়ানো গেলে দূষণের পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব হবে।
গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়ন্ত্রণে সাধারণ মানুষের কতটা উপকার হবে তা নিয়ে সংশয়ে বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত, পেট্রল এবং ডিজেলের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার যখন হাত তুলে নিয়েছিল তখন বলা হয়েছিল, বাজারের চাহিদা-জোগান অনুযায়ী দাম স্থির হওয়া। কিন্তু, সেই নীতি কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। যখনই সরকারের রাজকোষে টান পড়েছে, পেট্রল-ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক অথবা ভ্যাট/বিক্রয় কর বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানো হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর গত ছ’বছরে মোট ১২ দফায় মোদী সরকার লিটার পিছু পেট্রলে ২৩.৭৮ টাকা ও ডিজেলে ২৮.৩৭ টাকা উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্যসরকারগুলিও তার উপর ২৫-৩৫ শতাংশ বিক্রয় কর ও ভ্যাট আদায় করে। সমালোচকদের মতে, গ্যাসের মূল্য বিনিয়ন্ত্রণ করা হলে সাধারণ মানুষ এর ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।