গত ১৫ জুন রাতে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনা সেনার সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহীদ হন। আহত হন আরও ৭৬ জন। সেদিনের সংঘর্ষের পর থেকেই গোটা দেশ চীনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে। দেশজুড়ে চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধ যুদ্ধ রবও উঠছে। এবার গালওয়ান সংঘাত পরবর্তী এ হেন চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে আকসাই চীন দখলমুক্ত করতে প্রস্তুতি শুরু করে দিল ভারতীয় সেনা।
প্রসঙ্গত, ১৯৬২-র যুদ্ধের পর, প্রায় ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার অংশ জুড়ে বিস্তৃত ভারতীয় ভূ-খণ্ডের এই অঞ্চলটি দখল করে বসে রয়েছে চীন। গত কয়েক মাসে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীন সেনা সমারোহ বাড়ার সঙ্গেই ভারতও কিন্তু সমরসজ্জা শুরু করে দিয়েছে। সেনা বাহিনীর তিনটি ডিভিশনকে মোতায়েন করে, ভারতও শক্তি বাড়িয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাংকও ক’দিন হল নিয়ে আসা হয়েছে পূর্ব লাদাখে।
উল্লেখ্য, ১৯৬২-র সংঘর্ষের সময় লাদাখ সীমান্তে ভারতের একটিই মাত্র ব্রিগেড সেখানে ছিল। ২০০০ জওয়ান ছিল ওই ব্রিগেডে। বর্তমানে লাদাখের সুরক্ষায় তিনটি বিভাগের ৪৫,000 সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের অনুপাত হল ১:১২। অর্থাৎ, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪৫০০০ সৈন্যের মুখোমুখি হতে চীনের ৫ লক্ষ সৈন্যের শক্তি প্রয়োজন।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট লাদাখকে জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে, পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেয় কেন্দ্র। নয়াদিল্লীর এই পদক্ষেপে তীব্র আপত্তি তুলেছিল বেজিং। কারণ তিব্বত থেকে জিনজিয়াং প্রদেশে যাওয়ার মসৃণ পথ আকসাই। যদি, এই রুটটি কোনও ভাবে অবরুদ্ধ করা হয়, তবে চীনকে কারাকোরাম হয়ে বিকল্প পথে পৌঁছতে হবে। আর এখন ভারত যদি আকসাই চীনের দিকে এগোয়, জিনজিয়াং প্রদেশের ওপর থেকে চীনের দখল হারিয়ে ফেলার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, আকসাই চীন নিয়ে ভারত ও চীনের বিরোধ বহু দিনের। এটি ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখের অংশ ছিল। কিন্তু চীনের দাবি, আকসাই চীন তাদের জিংজিয়াং প্রদেশের অংশ। বিরোধ সেখানেই। আসলে ওই অঞ্চলটির আয়তন ৩৭২৪৪ কিলোমিটার। ভারতের অনেকগুলি রাজ্য এই অঞ্চলটির থেকে ছোট। গোয়ার চেয়ে ১০ গুণ বড়। সিকিমের চেয়ে ৫ গুণ বড়। বিশ্বের কয়েক’টি দেশও আকসাই চীনের আয়তনের তুলনায় ছোট। তাইওয়ান, বেলজিয়ামের থেকে এর আয়তন বেশি।