গত ফেব্রুয়ারিতে পেট্রোল-বোমা-অ্যাসিড ছুঁড়ে, গাড়ি জ্বালিয়ে যে তাণ্ডব চলছিল দিল্লীর রাস্তায়, সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনও ভোলেনি দেশবাসী। উত্তর-পূর্ব দিল্লীর সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীই সম্প্রতি দিল্লী পুলিশের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন যে মুসলিমদের খতম করার নির্দেশই এসেছিল বিজেপি কাউন্সিলর বা বিধায়কের কাছ থেকে। আর তারপরই সেই ঘটনায় অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হতে পারেন কয়েকজন নেতা।
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে ঘটে যাওয়া দাঙ্গার ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে দিল্লী। অভিযোগকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নারকীয় হত্যালীলার সাক্ষী থেকেছেন তাঁরা। প্রাণভয়ে চুপ থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। অভিযুক্তের তালিকায় আছেন জোহুরিপুরের বিজেপি কাউন্সিলর কানহাইয়া লাল, কারাওয়াল নগরের বিজেপি বিধায়ক মোহন সিং বিস্ট, মুস্তাফাবাদের বিধায়ক জগদীশ প্রধান, উত্তরপ্রদেশের বিধায়ক নন্দকিশোর গুজ্জর এবং দিল্লীর বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র ও হিন্দুত্ববাদী নেত্রী রাগিণী তিওয়ারি।
জানা গিয়েছে, এঁদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো ও দাঙ্গায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এঁদের কয়েকজন প্রকাশ্যে গুলিও চালিয়েছেন। তা সত্ত্বেও আজও তাঁরা পুলিশের নাকের ডগায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি–সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ পরিকল্পনা করে চার্জশিট থেকে কপিল মিশ্রর নাম বাদ দিয়েছে। যদিও পুলিশ সূত্রের খবর, শিগগিরই গ্রেফতার হতে পারেন কয়েকজন অভিযুক্ত বিজেপি নেতা।
উল্লেখ্য, ১১ মার্চ গোকুলপুরী থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ভাগীরথী বিহার এলাকার এক বাসিন্দা। ২৪ ফেব্রুয়ারি ভাগীরথী বিহারে ১/৩ গলির ঘটনার বর্ণনা করেছেন তিনি। বলেছেন, স্থানীয় জোহুরিপুরের বিজেপি কাউন্সিলর কানহাইয়া লাল শিবমন্দিরের দিক থেকে আসা উত্তেজিত শতাধিক লোককে গালমন্দ করে নির্দেশ দিচ্ছিলেন, ‘মুসলমানদের মেরে ঘর-সহ জ্বালিয়ে দাও।’
তারপর তাঁর উপস্থিতিতেই ত্রিশূল, তরোয়াল, কুড়ুল ও পিস্তল হাতে নিয়ে একদল লোক ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘আগ লাগাও’ স্লোগান তুলে গোটা এলাকায় ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। বলা হয়েছে, কাউন্সিলর কানহাইয়া লাল ও বিজেপি নেতা যোগেন্দ্র জিন্সওয়ালা আক্রমণকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। অভিযোগপত্রে এ-ও বলা হয়েছে, ‘এই ঘটনার পর পাশের সমস্ত বাড়ি থেকে আবাসিকরা বেরিয়ে এসে সারা রাত সংখ্যালঘুদের বাড়ি পাহারা দিয়েছেন।’
পুলিশের কাছে জমা পড়া অন্য একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘আক্রমণকারীরা পালচকের দিক থেকে জগদীশ প্রধান জিন্দাবাদ, কপিল মিশ্র জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে দিতে মুসলিমদের বাড়িঘর জ্বালাতে শুরু করেছিল।’ ওই সময় কানহাইয়া লালকে ফোনে বলতে শোনা গেছে, ‘জগদীশ বলে দিয়েছেন, মুসলমানদের মেরে খতম করে দাও। তার পরেই কালে ও মোহিত নামের দুই যুবক গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। সঙ্গে থাকা অন্যরা মসজিদ লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়তে থাকে।’