লাদাখ নিয়ে সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সোমবার সকালে সেই নিয়েই মোদীকে তুলোধোনা করলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা কথা বলা কূটনীতি নয়।’
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই মিথ্যা তথ্য দেওয়া কূটনীতি নয়, তা মজবুত নেতৃত্বের কাজও নয়। সত্যিটা কখনওই চেপে রাখা যায় না।’ এদিন তিনি আরও বলেন, ‘গত এপ্রিল মাস থেকে বারবার গালওয়ান উপত্যকা ও প্যাঙ্গং লেকের কাছে ঢুকে পড়ে চীন অতিশয় নির্লজ্জ ভাবে ও বেআইনি ভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশকে তাদের বলে দাবি করছে। ওদের হুমকি ও হম্বিতম্বির সামনে আমরা মাথা নত করতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রীর কথাকে ব্যবহার করে তাদের দাবির যথার্থতা প্রমাণের সুযোগও দিতে পারি না। সরকারের উচিত সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নিয়ে এই সংকটের মোকাবিলা করা।’
এদিন তাঁর বিবৃতিতে মনমোহন আরও বলেছেন, ‘আমরা এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছি। সরকার কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বা পদক্ষেপ করছে (লাদাখ সংঘাত নিয়ে) তা দিয়েই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের বিচার করবে। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা নিয়ে কোনও মন্তব্য বা ঘোষণা করার সময়ে প্রধানমন্ত্রী যেন শব্দের ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকেন।’ মনমোহন এদিন বোঝাতে চেয়েছেন, সরকারকে সত্যি অবস্থান তুলে ধরতে হবে। শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা দিতে হবে। নইলে তা দেশের সঙ্গে ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, গোটা বিবৃতির মধ্যে দিয়ে মনমোহন মোদ্দা এই কথাটিই তুলে ধরতে চেয়েছেন যে লাদাখ সংঘাত নিয়ে দেশকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, যা তিনি ঠিক করেনি। ঘরোয়া রাজনীতিতে মোদীকে অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়াই তাঁর লক্ষ্য।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সর্বদল বৈঠকের শেষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় জানিয়েছিলেন, লাদাখ সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে কেউ ঢুকে পড়েনি, কেউ ঢুকেও বসে নেই। ভারতের কোনও সেনা চৌকিও দখল হয়ে যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর সেই বিবৃতির পরই স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন ওঠে যে ২০ জন সেনা জওয়ান তা হলে কীভাবে মারা গেলেন? তা হলে তো এই মানে দাঁড়ায় যে ভারতীয় সেনা চীনের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিল। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের ফলে তো চীনের অবস্থান পোক্ত হচ্ছে। কারণ, তারা প্রথম থেকে দাবি করছে যে চীনা সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকেনি। ভারতীয় সেনাই শর্ত লঙ্ঘন করেছে।