১৫ জুন রাতে ঠিক কী হয়েছিল? আগ্নেয়াস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও ভারত-চীন সেনার মধ্যে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হল? নানা জল্পনা, নানা মত থাকলেও সেনা বা সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করল, গালওয়ান উপত্যকার ওয়াই পয়েন্টে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করেছিল। বিবাদের সূত্রপাত সেটা নিয়েই। জানা গেছে পরিকল্পিত ভাবেই হামলা চালিয়েছিল চীনা সেনা। তারা অপেক্ষাকৃত উঁচু অবস্থানে ছিল। ভারতের পক্ষে ছিল ১০০ অফিসার-জওয়ান। চীন জড়ো করেছিল প্রায় ৩৫০ সেনা। সংঘর্ষ স্থায়ী হয়েছিল প্রায় তিন ঘণ্টা।
১৫ জুন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত গালওয়ান উপত্যকার পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ (পিপি-১৪)-এ ভারত-চিন সংঘর্ষে ভারতের দিকে বিহার রেজিমেন্টের এক কর্নেল ও ১৯ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। ওই পিপি-১৪ চীন সেনা দখল নেওয়া থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। সেখান থেকে চিনের সেনা সরাতে ১৫ জুন রাতে পূর্ব লাদাখের শিয়ক ও গালওয়ান নদীর সংযোগস্থলে ওয়াই পয়েন্টে দু’দেশের সামরিক পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তাতে যোগ দিয়েছিলেন ৩ নম্বর ডিভিশনের কমান্ডার ও অফিসাররা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভারতীয় ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ওই পিপি-১৪ থেকে সরে যাবে চীনা সেনা। ১৬ বিহার রেজিমেন্টের উপর দায়িত্বভার বর্তায় ওই পিপি-১৪-এ গিয়ে চীনের সেনাকে সরে যেতে বলার জন্য। সেই অনুযায়ী বিহার রেজিমেন্টের একটি ছোট টহলদারি দলকে ওই পয়েন্টে পাঠানো হয়।
বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা ওই ১৪ নম্বর পয়েন্টে গিয়ে দেখেন ১০-১২ জন চীনা সেনা সেখানে অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করে পাহারা দিচ্ছে। বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা তাঁদের সরে যেতে বলেন। কিন্তু তাঁরা এলাকা ছাড়তে রাজি হননি। তবে তখন আর বাদানুবাদ না করে ওই জওয়ানরা ইউনিটে ফিরে যান সেই খবর দিতে। কিন্তু চীনা বাহিনী আন্দাজ করেছিল যে, ইউনিটে গিয়ে খবর দিলে ফের ভারতীয় সেনা বড় বাহিনী নিয়ে ফিরতে পারে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু করে দেয় তারা। পিপি-১৪-এর কিছুটা উপরের দিকে জড়ে হয় প্রায় ৩৫০ সেনা জওয়ান। মজুত করা হয় অস্ত্রশস্ত্রও।
চীন সেনার এই নাছোড় মনোভাবের খবর পৌঁছনোর পর বিহার রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার সন্তোষ বাবুর নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি দল ওই পেট্রোলিং পয়েন্টে পৌঁছয়। চীনের বাহিনীকে এলাকা ছাড়তে বলায় শুরু হয় বাদানুবাদ। বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা তখন ওই অস্থায়ী কাঠামো ভাঙতে শুরু করে দেন। তাতেই শুরু হয় হাতাহাতি ও মারপিট। কিন্তু চিন আগে থেকেই অস্ত্র মজুত করেছিল। তুলনামুলক উঁচু অবস্থানে থেকে শুরু করে পাথরবৃষ্টি। খবর পেয়ে ভারতের পক্ষের পিপি-১৫ এবং পিপি পিপি-১৭এ থেকে আরও জনা পঞ্চাশেক সেনা জওয়ান পরে যোগ দেন।
দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষ হয়েছিল বলে এএনআই-এর ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের বহু সেনা আহত অবস্থায় সারা রাত পড়ে ছিল ওই এলাকায়। অনেকে মারা গিয়েছিলেন। পরের দিন সকালে পরিস্থিতি শান্ত হলে তাঁদের চীনের হাতে তুলে দেয় ভারতীয় সেনা।