আড়াই দশক ধরে নিয়ম বজায় ছিল, ভারত ও চিনের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় কেউ গুলি চালাবে না। বিস্ফোরণও ঘটাবে না। দু’দেশের সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দু’দিকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত এই নিয়ম মেনে চলবে। কিন্তু সোমবার গলওয়ানের হামলা সব হিসাব বদলে দিয়েছে। আর তারপরেই ফের মুখ পুড়ল মোদী সরকারের। প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি কেন্দ্র ব্যর্থ চীনের মেজাজ বুঝতে আর সেই ব্যর্থতার মাশুলই কি দিল ২০ ভারতীয় জওয়ান?
অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি অফিসারেরা বলছেন, অন্তত চারটি বিষয়ে মোদী সরকারের আগেই টনক নড়া উচিত ছিল। এক, অভূতপূর্ব ভাবে বিপুল সংখ্যায় চিনের সেনা মোতায়েন। দুই, গালওয়ানের মতো নতুন এলাকায় চীনের ঢুকে পড়া এবং সেখানে ঘাঁটি গেড়ে ফেলা। যা মোদী সরকার সরকারি ভাবে এত দিন মানতে চায়নি। তিন, বরাবর ফাঁকা পড়ে থাকা এলাকা দখল করে ফেলা। চার, লাদাখে সংঘাতের শুরু থেকেই চীনের সেনার আগ্রাসী মনোভাব।
চীনের এই নতুন প্রবণতা পর্যালোচনা না করে কেন তাদের সেনার মুখোমুখি হতে পাঠিয়ে দেওয়া হল সেনা অফিসার ও জওয়ানদের, তা নিয়ে বুধবার সকাল থেকেই সেনাবাহিনীর অন্দরমহলে এবং অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে। এ বিষয়ে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়তের ভূমিকা নিয়েও ঘরোয়া আলোচনায় প্রশ্ন তুলেছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তারা। তাঁদের মতে, নতুন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফেরই কাজ হল পরিস্থিতির পর্যালোচনা না করে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জানানো।
সোমবার রাতে চীনের সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনার উপরে কাঁটাতার জড়ানো লাঠি, লোহার রড ও পাথর নিয়ে চড়াও হওয়ার পরে গুলি না করার সেই নিয়ম বদলের দরকার রয়েছে বলে এ বার মনে করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেনাবাহিনীর এক সূত্রের বক্তব্য, “ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি আগেও হয়েছে। গত কয়েক বছরে চিনের সেনাকে পাথর ছুড়তেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু লোহার রড, কাঁটা বা পেরেকওয়ালা লাঠি দিয়ে হামলা ভয়ঙ্কর। তা-ও আবার ভারতেরই এলাকায় ঢুকে। এ সব বরদাস্ত করা যায় না।”
এক কর্নেল-সহ ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তথা সেনার শীর্ষ স্তরে এই ‘বোধোদয়’ দেখে প্রশ্ন উঠেছে, লাদাখের পরিস্থিতি কি আঁচ করতে ভুল হয়েছিল? চীনের সেনা যে এতখানি ‘রণং দেহি’ মনোভাব দেখাবে, তা কি দিল্লীর নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লক বুঝতে পারেনি?