গোড়ায় সরকারি চাকুরে নন অথচ সরকারি পরিষেবায় যুক্ত, এমন ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘স্বাস্থ্যসাথী’র আওতায় আনা হয়েছিল। পরে বিভিন্ন ধরনের শিল্পী ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের হরেক পেশাদারকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ধাপে ধাপে। আর তার ফলেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের উপভোক্তা বর্তমানে দেড় কোটি পরিবার। আরও অনেক পরিবারকে নথিভুক্ত করা হবে। কেন্দ্রর কোনও সহায়তা না পেয়েও এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে এই স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব খরচই বহন করে চলেছে রাজ্য সরকার।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যবাসীর কল্যাণের জন্য একাধিক প্রকল্প চালু করেন মমতা। সেই সময়ই ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাজ্যে চালু হয় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এই প্রকল্প চালুর পর এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ১১ লক্ষ ২৩ হাজার রোগী এই ক্যাশলেস চিকিৎসার সুবিধা পেয়েছেন। আগামী দিনে কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা হিসেবে নয়, যত পরিবার মাপকাঠি অনুযায়ী ‘স্বাস্থ্যসাথী’ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হবে, সেই সমস্ত পরিবারকেই এই প্রকল্পের আওতায় আনার চেষ্টা করবে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘ফি বছর পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। এর আওতায় রাজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষকে ইতিমধ্যেই আনা গেছে। আরও পরিবার যাতে এর সুবিধা পায় সেই চেষ্টাই চলছে।’
দেড় কোটি পরিবারের মধ্যে থেকে পাঁচজন সদস্য এর সুবিধা ভোগ করলে তাহলে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী। এই প্রকল্পের উপভোক্তাদের পরিবারের প্রধানের নামে একটি স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাধারণ অসুস্থতা ছাড়াও ক্যান্সার, রক্তের ক্যান্সার, সার্জারি, নিউরো সার্জারি, অর্থোপেডিক, কার্ডিওলজি, এন্ডোক্রিনোলজি, কার্ডিওথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জারি, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি-সহ আরও বেশ কিছু জটিল রোগের চিকিৎসা করানোর সুযোগ ও বিভিন্ন প্যাকেজের সুবিধাও রয়েছে। কোনও পরিবারের একজন কিংবা সর্বাধিক পাঁচ জন সদস্য মিলেও ওই ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা করাতে পারেন। প্রত্যেক বছর কার্ডটি অটোমেটিক রিনিউয়াল হয়। সরকারি হাসপাতাল তো বটেই এই প্রকল্পে নথিভুক্ত হওয়া বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমেও পরিষেবা পাওয়া যায়।
বিভিন্ন গ্রেড অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ১৫৭০টি হাসপাতাল পরিষেবা দিচ্ছে। বিভিন্ন জেলা নির্বিশেষে তা ভাগ করা রয়েছে। এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে কোনও অসুবিধা হলে স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে অনলাইনে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা কোনও রোগীকে হাসপাতাল থেকে যেন ফেরত পাঠানো না হয় তারও নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কারা এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পাওয়ার যোগ্য, তা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। বিপিএল ছাড়াও, যাদের আয়ের কোনও সংস্থান নেই, পরিবারের উপার্জন কম, ঘর-বাড়িও ঠিকমতো নেই, এরকম মানুষও এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠী, আশা, আইসিডিএস কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ একাধিক সরকারি দফতরের অস্থায়ী কর্মীরা স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পাচ্ছেন।