ছাত্রজীবনে ভীষণই মেধাবী ছিলেন। বিজ্ঞানকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন। দিল্লী কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় সপ্তম স্থান পেয়েছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানের অলিম্পিয়াডে জয়ী হয়েছিলেন। হতেই পারতেন মেধাবী, উচ্চপদস্থ চাকুরে কিংবা বিজ্ঞানী। তবে নিজের প্যাশনকে সঙ্গী করে হয়ে উঠেছিলেন রুপোলি জগতের একজন। তবে নিজের শিকড়কে ভোলেননি। তাই অভিনয় ছাড়াও রুপোলি রেখাকে নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। এমনকি বিজ্ঞানকে ভালবেসে চাঁদের মাটিতে জমি কিনে ফেলেছিলেন তিনি।
হ্যাঁ, লাইট-সাউন্ড-ক্যামেরার অবসরে তাঁর সময় কাটত আকাশের চাঁদ-তারাদের সঙ্গেই। চাঁদের চিরঅন্ধকার দিকটি, অর্থাৎ যে অংশটি সব সময় পৃথিবীর বিপরীত দিকে থাকে, সেই দিকে ‘মেয়ার মাস্কোভিয়েন্স’ বা ‘সি অব মাসকোভি’ অংশে জমি কিনেছিলেন সুশান্ত। জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল লুনার ল্যান্ডস রেজিস্ট্রি-র কাছ থেকে এই জমি কিনেছিলেন সদ্য প্রয়াত অভিনেতা। ২০১৮-র ২৫ জুন তাঁর নামে ওই চান্দ্র ভূখণ্ড নথিভুক্ত হয়। তবে আন্তর্জাতিক চুক্তি ও নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবীর বাইরে কোনও মহাজাগতিক অংশ কারও আইনি সম্পত্তি হতে পারবে না। প্রসঙ্গত, বলিউডে সুশান্ত-ই প্রথম নায়ক, যিনি চাঁদের জমি কিনেছেন। এছাড়াও, শাহরুখ খানকে চাঁদে এক খণ্ড জমি উপহার দিয়েছেন তাঁর অনুরাগী।
রাতের আকাশের প্রতিও দুর্নিবার আকর্ষণ ছিল পদার্থবিজ্ঞানের এই মেধাবী ছাত্রের। তাঁর কাছে ছিল অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ। সময় পেলেই চোখ রাখতেন তারাদের সংসারে। এইজন্য তাঁর ভক্তরা মজা করে বলতেন, সুশান্ত নাকি ওই ভাবে চাঁদের মাটিতে নিজের জমি দেখভাল করতেন! মহার্ঘ্য টেলিস্কোপ হাতে পেয়ে খুশি হয়েছিলেন একেবারে বাচ্চা ছেলের মতোই। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন, ‘এটা বিশ্বের আধুনিকতম টেলিস্কোপের মধ্যে অন্যতম। এ বার বাড়ি থেকেই শনিগ্রহের বলয় দেখতে পাব।’
অবসরে সেই টেলিস্কোপেই চোখ রেখে মহাকাশে সফর করতেন সুশান্ত। শনির বলয়, বৃহস্পতির চাঁদ পেরিয়ে পাড়ি দিতেন অন্তহীন ছায়াপথ বেয়ে। পথ হারিয়ে সেই ছায়াপথ জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ত তাঁর নিজের ঘরেও। তাঁর ঘরের দেওয়ালে আঁকা ছিল চাঁদে মানুষের প্রথম পা রাখার ছবি। কোনও এক দেওয়ালে ছিল অন্য মহাকাশ অভিযানের ছবি। দেওয়ালের গ্রাফিতিতে ধরা দিতে চাঁদের ষোলো কলাও। মহাকাশকে ভালবেসে মহাকাশচারীর পোশাকে ঘুরে এসেছিলেন নাসা-র সদর দফতরও। তাঁর ঘরের টেবিলে সাজানো থাকত মহাকাশযানের মডেল।
জীবনকে আকণ্ঠ পান করে ভালবাসতেন স্বপ্নের উড়ানে পাড়ি দিতে। কিনেছিলেন দুর্মূল্য ফ্লাইট স্টিমুলেটর। সাধারণত এই স্টিমুলেটর পাইলটদের প্রশিক্ষণের কাজে লাগানো হয়। শূন্যের পাশাপাশি গতির নেশা ছিল পথেও। তাঁর কাছে ছিল মূল্যবান বিএমডব্লু কে ১৩০০ আর মোটরসাইকেল। পছন্দের বাহন ছিল বিলাসবহুল স্পোর্টসকার মাসেরাতি কোয়াত্রোপোর্তে এবং ল্যান্ডরোভার রেঞ্জ রোভার এসইউভি। শোনা যায়, ছবি পিছু তাঁর পারিশ্রমিক ছিল পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকা। সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৯ কোটি টাকা। উপার্জনের বেশির ভাগই তিনি ব্যয় করতেন নিজের স্বপ্নছোঁয়ার প্রয়াসে।
মহাকাশচারী, পাইলট হওয়ার স্বপ্ন থেকে পথ ভুলে চলে এসেছিলেন অভিনয়ে। মায়ের মৃত্যুর পরে ছন্নছাড়া জীবনে আঁকড়ে ধরেছিলেন নতুন প্যাশনকেই। বলিউডের প্রতিযোগিতার ইঁদুরদৌড়েও ভাটা পড়ল না স্বপ্নসন্ধানে। তাই তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলও ছিল বাকি তারকাদের থেকে আলাদা। কখনও সেখানে থাকত কম্পিউটার কোডিং শেখার প্রয়াস। বেশির ভাগ সময়েই তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যেত চাঁদের পিঠে গহ্বর, নীলসবুজ পৃথিবী বা উজ্জ্বল কালপুরুষ আলোকবর্ষর ছবি। আর আজ তিনিই নিজের স্বপ্নকে ছুঁতে চিরজীবনের জন্য পাড়ি দিলেন মহাশূন্যে।