মার্চে রেপো রেট এবং রিভার্স রেপো রেট কমানোর পর এপ্রিলেই ফের রিভার্স রেপো রেট কমাতে দেখা গিয়েছিল ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। মে মাসেও রেপো রেট আরও ৪০ বেসিস পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪ শতাংশ এবং রিভার্স রেপো রেটও ৪০ বেসিস পয়েন্ট কমে হয় ৩.৩৫ শতাংশ। এভাবে একটানা সুদের হার কমিয়েই চলেছে আরবিআই। সবমিলিয়ে মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত রেপো রেট (যে সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বল্পমেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) কমেছে মোট ১১৫ বেসিস পয়েন্ট। এর মধ্যে শেষ দফাতেই ৪০। রেপো রেট এতটা কমায় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও সুদের হার ছাঁটাই করছে। যার ফলে ঋণের ওপরে দফায় দফায় কমে আসছে মাসিক কিস্তি। শিল্প ছাড়াও সুবিধা হচ্ছে বাড়ি-গাড়ি ক্রেতাদের।
প্রসঙ্গত, কী সুদে ঋণ দেওয়া হবে, তার অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হল তহবিল সংগ্রহের খরচ। সেই খরচের ভিত্তিতে স্থির করা সুদের হার (এমসিএলআর) গত সপ্তাহেও কমিয়েছে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ব্যাঙ্ক, গৃহঋণ সংস্থা ও এনবিএফসি। এতে কিছুটা হলেও চাপ কমবে ঋণগ্রহীতাদের। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। ঋণের সুদ কমলে পণ্যমূল্যও কিছুটা কমার কথা। বস্তুত, সেটা হলেই সুদ কমার সুফল সামগ্রিক ভাবে পাবেন সাধারণ মানুষ। বাস্তবে কিন্তু তা হচ্ছে না। আবার অন্য দিকে, নাগাড়ে সুদ কমানো সত্ত্বেও প্রাণ ফিরছে না শিল্পে। বাড়ছে না পণ্যের চাহিদা, কর্মসংস্থান। অর্থাৎ, সুদ ছাঁটাইয়ের সরাসরি সুবিধা পাচ্ছেন শুধু বাড়ি-গাড়ির ঋণগ্রহীতারা। কিন্তু তাঁরা জনসংখ্যার আর কত শতাংশ?
উদ্বেগের দিক আরও আছে। ঋণে সুদ কমলে তা কমে জমার ওপরেও। যার ওপরে নির্ভর করে সংসার চালান সমাজের একটি বড় অংশের মানুষ। বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্তেরা। জমায় সুদ প্রতিনিয়ত কমতে থাকায় এঁরা কিন্তু বেশ চাপে। তিন-চার বছর আগে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁরা সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমে সুদ পেতেন ৮.৭ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী বয়োবন্দনা প্রকল্পে ৮ শতাংশ। এই দুই প্রকল্পেই সুদের হার নেমে এসেছে ৭.৪ শতাংশে। পাশাপাশি, ব্যাঙ্কে প্রবীণদের সর্বাধিক সুদ কমে হয়েছে ৬.৫ শতাংশ। বাকিদের ক্ষেত্রে তা বড়জোর ৫.৭ শতাংশ। যা কিনা আবার করযোগ্যও। অর্থাৎ করের হার যে ক্ষেত্রে ৩১.২ শতাংশ, সেখানে লগ্নিকারীর নিট প্রাপ্তি ৩.৯২ শতাংশ।
সুদ এই হারে কমতে থাকলে কিন্তু কমতে পারে সঞ্চয়ের প্রবণতাও। একটি কাল্পনিক হিসেবের দিকে চোখ রাখা যাক। ধরা যাক বছর পাঁচেক আগে অবসর নেওয়া কোনও ব্যক্তি ৫০ লক্ষ টাকা লগ্নি করে বার্ষিক গড়ে ৮.৫ শতাংশ হারে সুদ পেতেন। ফলে মাসে আয় হত ৩৫৪১৬ টাকা। মেয়াদ ফুরোনোর পর একই টাকা লগ্নী করে গড়ে ৭ শতাংশ সুদ পেলে, তাঁর মাসিক আয় দাঁড়াবে ২৯১৬৬ টাকা। অর্থাৎ মাসে আয় কমতে পারে ৬৩০০ টাকা। বছরে প্রায় ৭৫০০০ টাকা। অথচ এই সময়ের মধ্যে পণ্যমূল্য বেড়েছে। জমায় সুদ কমায় ১০ বছর মেয়াদি সরকারি ঋণপত্রের ইল্ডও নেমে এসেছে ৫.৭৯ শতাংশে। এতে অবশ্য আগে ইস্যু করা বন্ডের বাজার দর বেড়ে থাকবে।