বিগত ৩ মাস ধরে লকডাউনের জেরে রীতিমত ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে ভারতীয় অর্থনীতি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনুন্নতির প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এই নিয়েছে অনেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। কেউ বলেছেন, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি না করে আমরা আমাদের জীবন ঈশ্বরের হাতে সঁপে দিয়েই নিশ্চিন্তে আছি। আবার অনেকেই টেনেছেন অর্থমন্ত্রীর পাঁচ কিস্তির সাংবাদিক বৈঠকের কথা। যে বৈঠকে দেশের আর্থিক সংস্কারের সঙ্গে মাস্ক ও রোগ প্রতিহারী বর্মের উৎপাদন কত বেড়েছে তার তথ্য মিললেও, একবারের জন্যও উচ্চারিত হয়নি দেশে আপৎকালীন ভিত্তিতে ভেন্টিলেটরের সরবরাহ কতটা বেড়েছে সেই তথ্য।
আর বিরোধী সহ সাধারণ মানুষের এত অনুযোগ, তখনই অভিযোগ হয়ে ওঠে যখন সরকারি তথ্যই বলে- দেশে আয়ের নিরিখে শেষের ২৫ শতাংশের মধ্যেকার ৩৯ শতাংশই মারা যাওয়ার আগে কোনও চিকিৎসার সুযোগ পান না। বর্তমান জনসংখ্যার নিরিখে এই ২৫ শতাংশ মানে কিন্তু প্রায় ৩০ কোটি। আর তার ৩৯ শতাংশ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১২ কোটির কাছাকাছি। অর্থাৎ, করোনার ছোবল নয়, দেশের ১০ শতাংশের মতো মানুষ বা বর্তমান জনসংখ্যার হিসেবে ধরলে প্রায় ১২ কোটি মানুষ, মারা যান শুধুমাত্র সঠিক চিকিৎসা না পেয়েই।
চিত্রটা আরও কালো হতে থাকে, যখন দেখা যায় চিকিৎসার খরচ বাড়ছে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির থেকেও বেশি গতিতে। খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার যখন ৫.৮৪ শতাংশ, তখন চিকিৎসার খরচ বাড়ছে ৭ শতাংশেরও বেশি হারে। একদিকে রোজগার কমছে। আর একদিকে বাড়ছে সুস্থ থাকার খরচ। আর অসুস্থতা কাড়ছে আমাদের রোজগার। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামে পেশ করা গ্লোবাল হেল্থকেয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০৩০-এর মধ্যে অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে নানান রোগভোগের ফলে ভারতের ক্ষতি হবে প্রায় ৩২১ লক্ষ কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ ১ বছরের জাতীয় উৎপাদন খাবে অপ্রতুল চিকিৎসা ঘুণে। কিন্তু তা এড়াবার কোনও পদক্ষেপ সে ভাবে দেখাই গেল না কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। আয়ুষ্মান ভারত খাতায় কলমে ভাল প্রকল্প। কিন্তু দেশে চিকিৎসার পরিকাঠামোই যদি না থাকে, তা হলে স্বাস্থ্য বিমা থেকে আদৌ কি কোনো সুবিধা হবে জনগণের? করোনার ছোবলে নাগরিক এখন হাড়ে-মজ্জায় বুঝছেন এর অর্থ, কাছের মানুষের মৃত্যুর মূল্যে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতে গোটা জনসংখ্যার ১৪.৪ শতাংশ পরিবারে চিকিৎসা করাতে গিয়ে একজন সদস্যের গোটা বছরের খরচ চলে যায় এবং সাড়ে সাত কোটি মানুষের অসহায় মৃত্যুর এটা অন্যতম কারণ। এর পরেও কি আমরা এটাকে দেশের সমৃদ্ধি দশের সমৃদ্ধি বলব? প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই। কেন্দ্রীয় সরকারের ২০১৯ সালের স্বাস্থ্য সমীক্ষাই অনুযায়ী, ভারতে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় জাতীয় উৎপাদনের ১ শতাংশের একটু উপরে যখন বাংলাদেশ ও নেপাল ছাড়া অন্য প্রতিটি কাছের দেশগুলোতে স্বাস্থ্যখাতে খরচের অংশ আমাদের থেকে অনেক বেশি। তাই রাজ্যগুলিকে দোষারোপ নয়, বরং আত্মসমীক্ষা দরকার এবার কেন্দ্রেরই।