বৃহস্পতিবার ফের আর এক দফা বিজেপির ভার্চুয়াল জনসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আয়ুষ্মান ভারত থেকে পিএম কিসান, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা থেকে সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতি— একের পর এক বিষয়ে শাহকে জবাব দেন তিনি। পাশাপাশি, ‘রামের মুখে বামের’ প্রশংসার কটাক্ষও করেন পার্থ। এর আগে অমিত শাহর ভাষণের জবাব দিতে এক যোগে তিন তাবড় তৃণমূল নেতা অনলাইনে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। এবার তৃণমূল ভবনে ফের অমিত শাহর ভাষণের উত্তর দিলেন দলের মহাসচিব-সহ তিন নেতা।
ভার্চুয়াল জনসভায় বক্তব্যের সময় অমিত শাহ বলেছিলেন, তৃণমূলের থেকে বরং বামেদের শাসন ভালো ছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের মহাসচিব বৃহস্পতিবার বলেন, ‘অমিত শাহ আবার বাম আমলকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বামেদের ৩৪ বছরের শাসনকালে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিজের জীবন বিপন্ন করে দলের কর্মী ও সাধারণের আত্মত্যাগ সার্থক করে রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে অমিত শাহরা কতটুকু জানেন, সে প্রশ্নও তোলেন পার্থ। মনে করিয়ে দেন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনা।
উল্লেখ্য, অমিত শাহর বক্তব্যের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিল রাজ্যের সংস্কৃতিতে বদল আনা। একাধিকবার সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। পার্থ বলেন, ‘বহু অর্থ ব্যয় করে ভার্চুয়াল সভা করেছে বিজেপি। যিনি বাংলাকে সোনায় মুড়ে দেওয়ার কথা বললেন, তাঁর সামনেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে বাংলার সংস্কৃতি ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছিল। সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওঁদের নেতা বলেন ‘সহজ পাঠ’ বিদ্যাসাগরের লেখা। বাংলার মানুষ এমন সংস্কৃতি চান না।’ শাহকে তাঁর প্রশ্ন, বাংলার সংস্কৃতি মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে আপনারা সোনার বাংলা গড়বেন?
মঙ্গলবারের ভার্চুয়াল সভা থেকে শাহ রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে ১০ বছরের কাজের হিসেব চেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে শাহ বলেছিলেন, এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজের কাজের হিসেব দিন। সে প্রসঙ্গ তুলে পার্থ পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন বিজেপির দিকে। প্রচেষ্টা প্রকল্প, স্নেহের পরশ প্রকল্প-সহ রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে পার্থ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের সব কাজের হিসেব ওয়েবসাইটে দেওয়া রয়েছে, পারলে বিজেপি-ও ওয়েব সাইটে সে সব প্রকাশ করুক।
পার্থর সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী।প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিজেপির ভূমিকার সমালোচনা করেন। পার্থ বলেন, ‘আপনারা তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দেখান, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কী করেছেন। একটা প্রতিশ্রুতিও রাখেননি।’ এই বৈঠকেই রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কুম্ভীরাশ্রু বিজেপির। রাজ্য স্নেহের পরশ প্রকল্প চালু করেছে। কেন্দ্র পিএম কেয়ার তহবিল থেকে পরিযায়ী শ্রমিক প্রতি ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।’
বাংলায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু হতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে শাহ প্রবল আক্রমণ করেছিলেন মমতাকে। সে প্রসঙ্গে রাজীব বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ওই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করার অনেক আগেই বাংলায় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, ওই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের দেড় কোটি পরিবারের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে স্বাস্থ্যবিমা, কিন্তু কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কোটি ১২ লক্ষ পরিবার স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাবে। কেন্দ্রের প্রকল্প গ্রহণ করলে রাজ্যের ৩৮ লক্ষ পরিবার স্বাস্থ্যবিমা থেকে বঞ্চিত হত বলে তিনি দাবি করেন।
পিএম কিসান প্রকল্প বাংলায় চালু হতে না দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বঞ্চিত করছেন রাজ্যের কৃষকদের— এমন অভিযোগ তুলেছিলেন শাহ। জবাবে রাজীব বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই সব প্রকল্পের কথা বলছে বিজেপি। রাজীবের কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই রাজ্যের কৃষকদের ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন।’ শাহ বলেছিলেন, রাজ্য সরকার কৃষকদের তালিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র তাঁদের অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা করে দিয়ে দেবে। তা নিয়ে রাজীব বলেন, ‘সত্যিই যদি অত দরদ থাকে, তা হলে আমরা পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকা দিচ্ছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মেনে নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে পিএমকেয়ারস থেকে ১০ হাজার টাকা করে এখনই দিন।’’