লকডাউনের জেরে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। ভিন রাজ্য থেকে পায়ে হেঁটে ফিরতে গিয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকশো শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন দুর্ঘটনাতেও মারা গিয়েছেন অনেকে। পরিযায়ী শ্রমিকদের এই দুর্দশা দেখে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুর জোরালো করেছিল বিরোধীরা। চাপ তৈরি হয়েছিল গেরুয়া শিবিরের অন্দরেও। এই পরিস্থিতিতে আট কোটি পরিযায়ী শ্রমিকদের মে ও জুন এই দু’মাসের জন্য বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার ঘোষণা করে মোদী সরকার। কিন্তু সরকারি তথ্য থেকেই জানা যাচ্ছে জুন মাস পর্যন্ত মোট ২০ লক্ষ ২৬ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের হাতেই সরকারি রেশন পৌঁছছে। বাকিদের কাছে এখনও অধরা রয়েছে তা। আর এই তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ক্রেতাসুরক্ষা, খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রকের তরফে। যা প্রকাশ্যে আসার পরেই তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে দেশের রাজনীতিতে। কটাক্ষ করছে বিরোধীরাও।
আত্মনির্ভর ভারতের জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপরই এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেন, ‘যাঁদের কাছে রেশন কার্ড নেই তাঁদের আগামী দু’মাস প্রতিমাসে পাঁচ কেজি চাল বা গম দেওয়া হবে। আর পরিবারপিছু তাঁরা পাবেন এক কেজি করে ছোলা। আট কোটি পরিযায়ী শ্রমিকদের এই পরিষেবা দিতে সরকারের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।’
যদিও কেন্দ্রীয় ক্রেতাসুরক্ষা, খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার চালানো হলেও পর্বতের মূষিক প্রসব হয়েছে! মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘোষণা হলেও এখনও পর্যন্ত সরকারের ঘোষিত রেশন পেয়েছেন মাত্র ২০ লক্ষ ২৬ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। এর ফলে মোট সুবিধাভোগী শ্রমিকদের মাত্র ২.২৫ শতাংশ মানুষের কাছে এই সরকারি সুবিধা পৌঁছছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, মে ও জুনের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে মোট ৭ লক্ষ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পৌঁছনোর কথা ছিল। বাস্তবে তা পৌঁছছে মাত্র ১০ হাজার ১৩১ মেট্রিক টন। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও রাজ্যগুলিতে মোট ৪ লক্ষ ৪২ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য মজুত করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ১০ হাজার মেট্রিক টনের কিছু বেশি পরিমাণ দ্রব্য শ্রমিকদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে।