আপাতদৃষ্টিতে পাহাড় এখন শান্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সার্বিক প্রচেষ্টায় সেখানে নেই কোনও বনধের রাজনীতি, নেই কোনও আন্দোলন। কিন্তু করোনার থাবায় পাহাড়ে এবার দেখা দিতে চলেছে বড়সড় সঙ্কট। মারণ ভাইরাসের প্রভাবে আর লকডাউনের জেরে পর্যটক শূণ্য দার্জিলিংয়ে এবার হোটেল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেখানকার হোটেল মালিকদের সংগঠন। আর তার জেরেই চূড়ান্ত রকমের বিপর্যস্ত অবস্থা হয়েছে পাহাড়ের হোটেল শিল্পের সঙ্গে জড়িত ১০ হাজার মানুষের। তাই সবাই এখন তাকিয়ে রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পানে। যদি তিনি কিছু সমাধান করতে পারেন।
প্রসঙ্গত, পুজোর পর থেকে শুরু করা বর্ষার আগে পর্যন্ত সময় হল দার্জিলিংয়ের বুকে পিক সিজন। এই সময়টায় পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করে দার্জিলিং। শীতের প্রচন্ড ঠান্ডা আর বরফ পড়া উপভোগ করতেও আজকাল ভিড় জমাচ্ছেন দেশী বিদেশী পর্যটকেরা। সেই ভিড় আরও বাড়ে বসন্ত আর গ্রীষ্মকালে। কিন্তু এবার সেই ছবিটাই আমূল বদলে গিয়েছে। কার্যত করোনার আগমন আর তার জেরে লকডাউন, এই দুয়ের সাঁড়াশি চাপে পাহাড়ে মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিনমাস একজন পর্যটকও আসতে পারেননি। তার জেরে কোনও হোটেল এক পয়সাও আয় করতে পারেনি।
এবার তার জেরেই দার্জিলিংয়ের হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী ১ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তাঁরা পাহাড়ের সব হোটেল বন্ধ করে রাখবেন। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ততদিন এই অবস্থাই চলবে। আর এই সিদ্ধান্তের জেরেই বিপদে পড়েছে পাহাড়ের হোটেল শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে জড়িত প্রায় ১০ হাজার মানুষ। স্বাভাবিক ভাবেই পাহাড়ের এই দুর্দিনে বিপদে পড়া মানুষগুলো এখন চাইছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পদক্ষেপ নিক, যাতে হোটেল মালিকেরা তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেন।
উল্লেখ্য, দার্জিলিংয়ে প্রায় ৩৫০টি হোটেল রয়েছে। গত ৩মাস এইসব হোটেলের ১ পয়সা আয় না হলেও হোটেলের মালিকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, এপ্রিল থেকে জুনের বেতন হিসাবে তাঁরা বেতনের ৩৫ শতাংশ কর্মচারীদের দিয়ে দেবেন। আর জুলাই থেকে তো হোটেলই বন্ধন তাই বেতনও বন্ধ। এখন পাহাড়ে যদি ১০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েন তাহলে কোনও মতেই পাহাড় শান্ত থাকবে না। সব থেকে বড় কথা আবারও মাথাচাড়া দেবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন।
এই আশঙ্কা থেকেই ইতিমধ্যেই দার্জিলিংয়ের হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন জিটিএর চেয়ারম্যান বিনয় তামাং। কিন্তু সেই বৈঠক খুব একটা ফলপ্রসু হয়নি বলেই শোনা যাচ্ছে। অগ্যতা এবার জিটিএ থেকে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা শুরু হয়েছে নবান্নের সঙ্গে। শোনা যাচ্ছে নবান্নের নির্দেশে এবার বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামানো শুরু করেছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। আগামী সোমবার দার্জিলিঙে এই বিষয়ে বসতে চলেছে এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই হোটেল মালিক এবং কর্মীদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে জেলা প্রশাসন৷