উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার কৃষকের মেয়ে সে। ছোট থেকেই অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা তাঁর। তবুও সব বাধা-বিপত্তিকে জয় করে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ‘আমেরিকাস গট ট্যালেন্ট’-এর সিজন ১৫-য় জায়গা করে নিয়েছে সে। আর এই সাফল্যে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলার মেয়ে সোনালি মজুমদার। বিশ্বের সবথেকে বড় রিয়্যালিটি শো’য়ের মঞ্চে ভারতবর্ষকে প্রতিনিধিত্ব করে একরাশ আনন্দ আর আবেগের সুরে বাংলার মেয়ে ছোট্ট সোনালি বলল, ‘এটা সত্যিই একটা বিরাট অভিজ্ঞতা। নিজের দেশের হয়ে বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করা সত্যিই গর্বের।’
ছোট থেকেই নাচ এবং জিমন্যাস্টিকের প্রতি তার বড্ড ঝোঁক। বিশেষ করে সালসা সোনালির খুবই প্রিয়। ছোট্ট মেয়েটি তার ডান্সিং পার্টনার সুমন্ত মারোজু-র সঙ্গে চমৎকার সালসা নেচে, ‘আমেরিকাস গট ট্যালেন্ট’-এর বিচারকদের অর্থাৎ হোয়ই ম্যান্ডেল, হেইদি ক্লাম, সোফিয়া ভরগারা এবং সামন কোওয়েলদের একপ্রকার তাক লাগিয়ে দেন। সুমন্ত ও সোনালির সালসা দেখা মাত্রই পরবর্তী রাউন্ডের জন্য বিচারকদের ‘হ্যাঁ’ বলতে এক সেকেন্ডও ভাবতে হয়নি। সম্প্রতি টিভি-তে দেখানো হয়, সুমন্ত এবং সোনালির তাক লাগানো সেই পারফরম্যান্স। যে পারফরম্যান্স দেখে চক্ষু রীতিমতো চড়কগাছ গয়ে গিয়েছিল বিচারকদের।
‘আমেরিকাস গট ট্যালেন্ট’-এর বিচারকরা এই দুই প্রতিযোগীর ধুরন্ধর পারফরম্যান্স দেখার পরই স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়েছিলেন। শুধু বিচারকরাই নন। সেই নাচ হাঁ হয়ে চাক্ষুষ করছিলেন দর্শকরাও। বিচারকদের একজন হোয়ই বলছিলেন, ‘তোমরা সবাইকে অবাক করে দিলে, তোমাদের অভূতপূর্ব শক্তি দিয়ে। এই পারফরম্যান্স যেমনই বিপজ্জনক ছিল, তেমনই আবার অত্যন্ত বিনোদনমূলকও ছিল। আমি সত্যিই তোমাদের এই পারফরম্যান্সটা খুব ভালোবাসার সঙ্গে উপভোগ করেছি।’
সুমন্ত এবং সোনালি তাঁদের মেন্টর বিভাস চৌধুরীর শেখানো একটি বলিউড সালসা-ই ‘আমেরিকাস গট ট্যালেন্ট’-এর মঞ্চে নেচে দেখিয়েছিলেন। সোনালির কথায়, ‘জনপ্রিয় এবং গ্রুভি একটি হিন্দি গান আমরা সালসা হিসেবে সেখানে প্রদর্শন করেছিলাম। এই ধরনের নাচের পেস খুব বেশি হয়। বহু বার আমরা প্র্যাকটিস করেছিলাম। এই পর্যায়ে এসে মিস করার কোনও জায়গাই ছিল না। কারণ, ভারতবর্ষের হয়ে বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করছি। খুব ভালো করেই আমাদের স্যার তৈরি করে দিয়েছিলেন নাচটা। সকালে আমরা খুবই ক্লান্ত হয়ে যাই এবং একটু ঝিমুনি ভাবও আসতে শুরু করে। তবে দ্রুত সেই ভাব কাটিয়ে উঠে, আমরা পারফর্ম করি।’
নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর কৃষকের সংসারে নাচ একপ্রকার দিবাস্বপ্নের মতোই। তবুও মেয়ের স্বপ্নের উড়ানে কোনও কসরতই বাকি রাখেননি সোনালির বাবা। সোনালির কথায়, ‘উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বাগদার ছোট্ট একটা গ্রামে আমার বাড়ি। আমার বাবা কৃষক। সাড়ে তিন বছর বয়সে আমি জিমন্যাস্টিং শেখা শুরু করি। তার পর ধীরে ধীরে লক্ষ্য করি, নাচের গান বাজলেই অটোমেটিক্যালি আমার পা-ও নেচে উঠত। আমাদের গ্রামে বিশেষ করে আমাদের পাড়ায়, কোনও অনুষ্ঠানে কেউ নাচলেই আমার খুব আনন্দ হত। আমার গ্রামেই নাচের তালিম নিতে শুরু করি আমি। সেখানেই আমাদের নাচের স্যার, আমার মা-বাবাকে বিভাস স্যারের কথা বলে।’
২০১২ সালে মাত্র ৭ বছর বয়সেই সুমন্তর সঙ্গেই ‘ইন্ডিয়াস গট ট্যালেন্ট’ টাইটেল জিতেছিল ছোট্ট মেয়ে সোনালি। এ ছাড়াও জনপ্রিয় টেলিভিশন রিয়্যালিটি শো ‘ঝলক দিখলা যা’-তেও অংশগ্রহণ করেছিল সোনালি। এই সোনালিই আবার বিভাস সর্দারের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘ব্রিটেনস গট ট্যালেন্ট’-এও অংশগ্রহণ করেছিল। এরপরই ফেব্রুয়ারিতে সুমন্ত এবং সোনালিকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকা ছুটে গিয়েছিলেন তাঁদের প্রিয় বিভাস স্যার। ভারতে লকডাউন জারি হওয়ার কিছু দিন আগেই ফিরে আসেন। পরবর্তী রাউন্ডের জন্য দশম শ্রেণীর ছাত্রী সোনালি এবং তার ডান্স পার্টনার সুমন্ত এখন জোরকদমে প্রস্তুতি চালাচ্ছে।