দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে এখন নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হতে দেখা যায় তাঁকে। এবার ইউটিউবে আলোড়ন ফেলে দেওয়া শ্রদ্ধানন্দ পতি ওরফে বাগি শ্রদ্ধানন্দর নিশানায় বিজেপি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সাম্প্রতিক এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একহাত নিয়েছেন। ওই সাক্ষাৎকারে নির্মলা বলেছিলেন, দেশের নিম্নমধ্যবিত্ত একটি ব্যক্তির আয় বছরে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। অর্থমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে আকাশকুসুম বলে শ্রদ্ধানন্দের প্রশ্ন, একজন নিরাপত্তাকর্মী মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা রোজগার করেন। বছরে ১ লক্ষ ২০ হাজার। তাহলে এঁরা কোন শ্রেণিতে পড়বেন?
তাঁর দাবি, একজন নিম্নমধ্যবিত্ত যদি বছরে ১০ লক্ষ টাকা রোজগার করতে পারেন, তবে ৪ লক্ষ টাকা এমনিতেই তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা হবে। তাঁর ছেলেমেয়েদের ভাল স্কুলে পড়াতে পারবেন, ভাল স্বাস্থ্যপরিষেবা পাবেন। বছরে ১৮ লক্ষ টাকা তো এমবিএ, এমটেক, বিটেক করা ছেলেমেয়েরাও এদেশে রোজগার করতে পারে না! নামজাদা সরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ওইসব ডিগ্রিধারী ছেলেমেয়েরা যখন চাকরি ক্ষেত্রে যান, তখন তাঁদের বেতনের প্যাকেজ কোথা থেকে শুরু হয়, বিজেপি নেতা-নেত্রীরা কি জানেন? কথায় কথায় নির্মলা যে ‘ডেটা ব্যাঙ্ক’ দেখান, সেটা অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই নয়, দেশের মানুষ তা হাড়ে হাড়ে জানেন। নিম্নমধ্যবিত্তের আয় যদি বার্ষিক ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হয়, তবে এদেশে উচ্চবিত্ত কারা? তাঁরা তো তবে মাটিতে বাস করেন না!
শ্রদ্ধানন্দের মতে, অর্থমন্ত্রী হাজার হাজার মানুষকে যে ঋণ দেওয়ার কথা বলেছেন, তা কেবলমাত্র খাতায়-কলমে। আসলে সীতারমণ-সহ বিজেপির নেতারা নিম্নমধ্যবিত্তের সংজ্ঞাটাই জানেন না। প্রশ্ন তুলেছেন শ্রদ্ধানন্দ, রাজনীতি আসলে সেবা না চাকরি? যদি সেবা হয়, তাহলে কেন মন্ত্রীরা মোটা টাকার বেতন ও পেনশন নেন? কেন পান হাজারো সুযোগ-সুবিধা? আর যদি চাকরি হয়, তাহলে মন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা ঠিক কী? কী এমন যোগ্যতা আছে নির্মলার, যার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে প্রথমে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং তারপর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে দেন? শ্রদ্ধানন্দের বক্তব্য, তামাম দেশবাসীর মতো তিনিও ভেবেছিলেন, মোদীর ‘অাচ্ছে দিন’ দেশবাসীর জন্য শুভ কিছু বয়ে আনবে। মোদী হয়ত তাঁর কার্যপদ্ধতি বদলাবেন। কিন্তু তা হল কই!
তিনি আরও বলেন, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে এমন কী দিলেন, যাতে মধ্যপ্রদেশে সরকারটাই ধসে গেল! এই খেলাটা মোদী কখন খেললেন? যখন করোনা নিয়ে গোটা দেশ দুশ্চিন্তায়! করোনা মোকাবিলার থেকেও মোদীর কাছে বেশি জরুরি ছিল রাজনৈতিক প্যাঁচপয়জার। বিরোধী দল গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। তাকে পকেটে ভরে নেওয়ার মধ্যে কোনও কৃতিত্ব নেই। দেশের মানুষের কথা বিন্দুমাত্র না ভেবে হঠাৎ ২৫ মার্চ লকডাউন ঘোষণা করে দিলেন মোদি। মানুষকে আগে থেকে কি জানানো যেত না? আশ্চর্যের বিষয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তোষণ করার জন্য ‘নমস্তে ট্রাম্প’–এর আয়োজনে তিনি লেগে ছিলেন টানা একটি মাস!
শ্রদ্ধানন্দর সাফ কথা, নির্মলা তাঁর সাক্ষাৎকারে কেবল রাহুল গান্ধীর কী কী করা উচিত তার আখ্যান বর্ণনা করেছেন। বিজেপির কী কী করার ছিল, তার তালিকা কি তৈরি হয়েছে? রাহুলকে বিজেপির সবাই ‘পাপ্পু’ বলে ডাকে। এটাই বা কোথাকার সংস্কৃতি? অনুরাগ ঠাকুরের ‘গদ্দারোকোঁ গোলি মারো’ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শ্রদ্ধানন্দ। প্রশ্ন তুলেছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘মেড বাই ইন্ডিয়া’র তফাতটা ঠিক কোথায়? বিজেপি জমি দিচ্ছে স্যামসাঙ, ওপো, ভিভো–র মতো বিদেশি সংস্থাকে। তাতে দেশের কী উন্নতি হচ্ছে? দেশের লোককে চাকরি দিচ্ছে ওইসব সংস্থা। লাভের টাকা যাচ্ছে বিদেশে। ম্যাকডোনাল্ডের মতো একটা কোম্পানি ২৫ টাকার বার্গার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা ভারত থেকে কামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটা কেন হবে?