দরকার ছিল না আলাদা করে ফের কলকাতাকে চিঠি লেখার। কেকেআর তো দানের ফিরিস্তি দিয়েই দিয়েছিলো। বাংলা ও জেনে গেছিল শাহরুখের সংস্থা অর্থ সাহায্য করছে, ৫০০০ গাছ লাগাচ্ছে, দুই ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, কলকাতার মানুষজনকে রেশন পাঠাচ্ছে, বাসের বন্দোবস্ত করছে ভলেন্টিয়ারদের আসা যাওয়ার। শাহরুখের ব্যাক্তিগত ভাবে ভালোবাসা পাঠানোর দরকার ছিল না। কিন্তু ওই যে, দিল হর কিসি কে পাস হোতা হে, পার সব দিলওয়ালে নেহি হোতে।
দরকার ছিল না। এসবের পরে ফের তো শাহরুখকে দেশাত্মবোধের পরীক্ষা দিতে হবে। কেউ বলবে গদ্দার কেউ বলবে বাংলা বিদ্বেষী৷ কেউ শাহরুখের “করবো লড়বো জিতবো রে” কে বলবে টাকা তোলার স্টান্ট। কেউ বলবে প্রতিবার ওর বাংলায় ফিরে ফিরে আসা রাজ্যসভায় টিকিটের লোভে।যার একটা টুইট গোটা পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, সরকার ফেলে দিতে পারে, হিন্দু মুসলমানকে মিলিয়ে দিতে পারে তার এসবের দরকার পরে?
দিল্লির ছেলেটার কলকাতা নিয়ে এতো কিছুর দরকার ছিল না। বাকিদের মতো চুপচাপ থাকতেই পারতেন। সরকারিভাবে বাংলা থেকে কোন সাহায্য চাওয়া ও হয়নি। বাংলার থেকে তার উত্থান ও নয়। সামনে কোন সিনেমা ও মুক্তি পাচ্ছে না, ইডেনে কোন ম্যাচ ও নেই। তবু ও “বাদশা” যে তিনি।
দরকার ছিল না। বাকি খানেদের মতো সাবধানী হতেই পারতেন। আমির খানের ছবি কি বাঙালি কম দেখে? কিরণ রাও ও তো বাংলার মেয়ে, অমিতাভ বচ্চন ও বাংলার জামাই। তাই বলে বচ্চন সাহাব বা আমির খানের জন্য এতো দাবি, এতো অভিমান, এতো রাগ দেখানো হয়েছে? শাহরুখের জন্য হয়েছে। বহত কুছ হোতা হে! তুম নেহি সমঝোগি!
টাকা দিয়ে সবকিছু মাপা যায়? অর্থ সব কিনে নিতে পারে? যে ছেলেটি স্কুললাইফ থেকে জেল দিয়ে ব্যাকব্রাশ করে, হাত দিয়ে চুল কপালের থেকে সরিয়ে নেয়, একলা ঘরে আয়নার সামনে দু হাত ছড়িয়ে বলে সেনোরিটা তুম নেহি সমঝোগি, তার মনখারাপে শাহরুখই সামান্য খুশি আনতে পারে।
যার ঘরে আজ ও খুঁজলে হয়তো মিলবে কোন হলদে হয়ে যাওয়া পোস্টার, তার নাম শম্পা, সাবিত্রী, চম্পা, চামেলি যাই হোক না কেন, সে আসলে সিমরন, যাকে বাঁচতে শিখিয়েছে শাহরুখ খান। সাইক্লোন বা মহামারীর শেষে ওরা ঠিক জিতে ফিরবে।
চুনিবাবু, সব টাকা ছুঁড়ে দিয়ে কেনা যায় না, টাকা দিয়ে মাপা যায় না। এই ভীষণ অন্ধকার এক সময় ওই মানুষটা একবার “সব ঠিক হো জায়েগা” বললে এক গোটা দেশের মনে বল আসে। এই সবটা কতো টাকার দান সেটা হিসেব করতে পারবেন?
দিল তো সবার কাঁদে কষ্ট দেখে। কতোজন দিলওয়ালে হয়! বাদশা দেখতে হয় সব্বার জন্যে। তাই হয়তো চেন্নাই এর বন্যা হোক বা বাংলার সাইক্লোন, এসিড আক্রান্ত হোক বা লকডাউনে না খেতে পাওয়া স্পটবয়, সব্বার জন্য কিছু না কিছু রেখে যেতে হয়। ভরসা দিতে হয়, সব ঠিক হো জায়েগা!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত