উম্পুনের তাণ্ডবে সাধারণ জনজীবন বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অক্ষত রয়েছে সুন্দরবনের হাজার হাজার পশুপাখি। এমনকি ঘূর্ণিঝড়ে গোটা সুন্দরবন বিধ্বস্ত হয়ে গেলেও বাঘের মৃত্যুর কোনও খবর মেলেনি। বন দফতর সূত্রের খবর, ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করতে গত চারদিন ধরে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় চিরুনি তল্লাশি শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে বনকর্মীরা। গতকালও সেই কাজ পুরোদমে চলেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাঘেদের মৃত্যুর কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘উম্পুনে সুন্দরবনের বাঘের অথবা অন্য কোনও জীবজন্তুর মৃত্যু হয়েছে, এমন কোনও খবর মেলেনি। তবে সুন্দরবন ব্যঘ্র প্রকল্পের পাশ দিয়ে যে ১০৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের ফেন্সিং ছিল সেটা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেন্সিং থাকায় বাঘ কিংবা অন্য জন্তু জানোয়াররা লোকালয়ে বেরিয়ে আসতে পারে না। এটা খুব চিন্তার বিষয়। সেজন্য তড়িঘড়ি করে ফেন্সিং মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। যেই জায়গাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের।’
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, ঝড়ে সুন্দরবনের কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করে অরণ্য ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে সোমবারের মধ্যেই। সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে। তার পাশাপাশি বনকর্মীরা লঞ্চে করে সুন্দরবনের চারিদিকে টহল দিচ্ছেন। জঙ্গলের ভিতরে কোনও মৃতদেহ পড়ে আছে কিনা সেটাও সরেজমিনে খতিয়ে দেখছেন বনকর্মীরা।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘ অথবা অন্য কোনও জীবজন্তুর মৃত্যুর খবর আমরা পাইনি। আমাদের কর্মীরাও সবাই অক্ষত আছেন।’ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য বনপাল অতনু রাহা এই বিষয়ে জানান, ‘সুন্দরবনের বাঘেরা জল-জঙ্গল দু’টোতেই অভ্যস্ত। সুন্দরবনের ভিতরে অনেক উঁচু জায়গা আছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় যখন সমুদ্রের জল ভিতরে ঢোকে বাঘেরা তখন উঁচু জায়গাগুলিতে ঠাঁই নেয়। বাঘেরা জলেও অনেকক্ষণ ভেসে থাকতে পারে। সুন্দরবনের চারপাশে রয়েছে ঘন ম্যানগ্রোভ। সেখানে এসে ঝড় বাধাপ্রাপ্ত হয়। তার জন্যই বার বার সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লেও বাঘেদের গায়ে তার আঁচড় লাগে না।’