বুধবার নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকেই উম্পুনের গতি-প্রকৃতির ওপর নজর রেখেছিলেন তিনি। আর এই অতি প্রবল সাইক্লোন রাজ্যে মারাত্মক ধ্বংসলীলা চালানোর পরই দ্রুত তার মোকাবিলার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে যেমন মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং ত্রাণ-পুনর্গঠনে হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছেন তিনি। এবার ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত বাংলার পাশে দাঁড়ানোর প্রশ্নে কার্যত গোটা দেশের আবেগকে সঙ্গে পেলেন তৃণমূল নেত্রী।
গতকাল দুপুরেই প্রধানমন্ত্রী বাংলার বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করে আশ্বাস দিয়েছেন আর্থিক সাহায্যের। বিকেলে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ডাকা বিরোধীদের বৈঠকে, দেশের ২২টি রাজনৈতিক দল, বাংলা ও উড়িষ্যার বিপর্যয় নিয়ে একটি লিখিত প্রস্তাব পেশ করল। তাতে দাবি তোলা হয়েছে, কেন্দ্র অবিলম্বে একে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করুক। রাজ্যকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করুক পরিস্থিতি মোকাবিলায়। সনিয়ার নেতৃত্বে ওই ভিডিয়ো বৈঠকে ২২ দলের নেতারা উঠে দাঁড়িয়ে আমপান-তাণ্ডবে মৃতদের জন্য নীরবতা পালন করেন।
বৈঠক শুরু হয় ৩টেয়। পৌনে ৪টে নাগাদ যোগ দেন তৃণমূল নেত্রী। ছিলেন ২২ মিনিট। রাজ্যে বিপর্যয় নিয়ে একের পর এক জরুরি বৈঠক চলছে। তাই আগেই মমতা দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে বৈঠকের গোড়া থেকে থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, বক্তব্যের শুরুতেই রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে সরব হন মমতা। বলেন, এক দিকে লকডাউন, নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, অন্য দিকে ঘূর্ণিঝড়— সঙ্কট দ্বিগুণ করে তুলেছে বাংলায়। পাশাপাশি রাজ্যে অর্থনৈতিক সঙ্কটও বাড়ছে প্রবল ভাবে।
রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র থেকে একের পর এক অ্যাডভাইসরি পাঠানোর সমালোচনা করেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, এটা রাজনীতি করার সময় নয়, একত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রয়োজন। কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে তাঁর কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু কেন্দ্র নাক গলাচ্ছে রাজ্যের কাজকর্মে। যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দেন, সব বিরোধী দল মিলে কর্মসূচী (প্ল্যান অব অ্যাকশন) তৈরি করুক। যা নিয়ে পরে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে। উপস্থিত বিভিন্ন দলের নেতা এবং বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের তিনি অনুরোধ করেন, এটি প্রথম বৈঠক হল ঠিকই, কিন্তু এই ধরনের আরও বৈঠকের প্রয়োজন রয়েছে। দরকার যৌথ কৌশল নির্ধারণের।
রাজনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, বক্তৃতার গোড়াতেই মমতা সোনিয়ার বক্তব্যের কিছু বিষয় উদ্ধৃত করে জানান, সেগুলিতে তাঁরও সায় রয়েছে। সোনিয়া তাঁর বক্তৃতায় মাত্র চার ঘণ্টার নোটিসে ২১ দিনের লকডাউন, রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা না করেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া, পরিযায়ী শ্রমিকদের দিক না দেখা, লকডাউন থেকে বেরোনোর কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না করা, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে সরঞ্জাম না পৌঁছনোর মতো বিষয় উল্লেখ করেছিলেন। তৃণমূল নেত্রী সেগুলি ফের উল্লেখ করে জানান, এই বিষয়গুলিতে তিনিও ভিন্নমত নন।