‘এটা জাতীয় বিপর্যয়ের থেকেও বড় ক্ষতি। তাই এই মুহূর্তে উম্পুনের তাণ্ডবের ফলে বিপর্যস্ত এলাকাগুলির পুনর্গঠনে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।’ শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে মহকুমাশাসকের দফতরে আয়োজিত বৈঠকে প্রশাসনিক আধিকারিদের এই নির্দেশই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে একাধিক পরিকল্পনা রূপায়ণের উপরেও জোর দেন তিনি।
এদিন মহকুমাশাসকের দফতরে প্রশাসনিক আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে চার ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে আমাদের। করোনা, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। একদিকে সরকারের যখন আয় নেই তখন উম্পুনের তাণ্ডবে এক লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এমনিতেই কোভিডের মোকাবিলা করতে গিয়ে আমাদের হাতে বেশি টাকা নেই। ফলে বড় কোন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া যাবে না। তাই এখন পুনর্গঠনের ওপরেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।’
মমতা বলেন, শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই ১০ লাখ বাড়ি ভেঙেছে। দ্রুততার সঙ্গে সেই বাড়ি নির্মাণের কাজ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে একশো দিনের প্রকল্পের শ্রমিকদের কাজে লাগানো যেতে পারে। দরকার হলে নতুন জব কার্ড দিতে হবে। লোকাল ছেলেমেয়েদেরও কাজে লাগানো হোক। গাছ কাটা, পুকুর পরিষ্কার, চাষের জমি পরিষ্কার এই সবকে একশো দিনের কাজের আওতায় আনতে হবে। এমনকী বিদ্যুৎ বিভাগকেও তিনি বলেন, ইলেকট্রিকের কাজ ছাড়া পোল বসানো, গর্ত খোঁড়া ইত্যাদি কাজের জন্য স্থানীয় ছেলেমেয়েদের কাজে লাগাতে হবে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠকে জানান, রাজ্যের যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার জন্য এক লাখ কোটি টাকা দরকার। কেন্দ্র দিয়েছে এক হাজার কোটি। তবে পুনর্গঠনের জন্য ঠিক কত টাকা দরকার, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ কত তার হিসেব করার জন্য রাজ্যের পঞ্চায়েত থেকে সেচ, কৃষি সব দফতর মিলে যৌথভাবে সমীক্ষা চালাবে। তাঁর দাবি, রাজ্যে মোট ৬ কোটি ৭৩ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এটা জাতীয় বিপর্যয়ের থেকেও বড় ক্ষতি। তিনি সাফ বলেন, ‘৩ মাস কোনও রোজগার নেই সরকারের। এক টাকাও পাইনি করোনার জন্য। কেন্দ্র থেকে এক হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। এক লাখ কোটি টাকা লাগবে। যতটা পারব করব।’
উল্লেখ্য, এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে সব দফতরের প্রতিনিধিরাই উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, একসঙ্গে ত্রাণ দেওয়া এবং পুনর্গঠনের কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আমি রান্নাও করব, বইও পড়ব। এই ভাবে কাজ করতে হবে।’ মুখ্যমন্ত্রীর আরও নির্দেশ, যেখানে যেখানে দরকার পড়বে সেখানে একশো দিনের কাজের শ্রমিক ছাড়াও সেলফ হেল্প গ্রুপকে কাজে লাগাতে হবে। যে সব এলাকায় রেশন দোকান নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেখানে সেলফ হেল্প গ্রুপের সদস্যরাই বাড়ি বাড়ি রেশনের চাল, ডাল পৌঁছে দেবে।
এদিনের বৈঠক থেকে এই সময়ে স্বাস্থ্য দফতরকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন মমতা। বলেন, সাধারণ সর্দি, জ্বর থেকে করোনা কিংবা সাপে কামড়ানো রোগী সব দিকেই নজর রাখতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগকে দ্রুত সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি মমতা বলেন, পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে আপাতত বাড়ি বাড়ি পাউচ প্যাকেটে করে জল দিতে হবে। মৎসজীবীদের পাশে দাঁড়ানোর একগুচ্ছ নির্দেশের সঙ্গে বন দফতরকে বলেন এখনই সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো শুরু করতে হবে।
এই সব ত্রাণকার্যের সঙ্গে সরকারের যেসব সামাজিক প্রকল্প চলছে তাও চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন মমতা। বলেন, ‘সামাজিক প্রকল্পের টাকা ডাইরেক্ট উপভোক্তার কাছে যাবে। কেউ যেন কোনও অভিযোগ না করতে পারে।’ রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘জয় বাংলা জয় জহর প্রকল্পের এক পয়সা যেন নয় ছয় না হয়। তাহলে আমি ছেড়ে কথা বলবো না। সরাসরি প্রাপকদের হাতে টাকা দেওয়া হবে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পঞ্চায়েত সমিতির কাউকে নয়। টাকা গরীব মানুষের হাতে দিতে হবে।’ কেউ যাতে কোনও দুর্নীতি না করেন জেলাশাসককে সেদিকে কড়া নজর রাখার নির্দেশও দেন তিনি।