একা করোনায় রক্ষে নেই, উম্পুন দোসর! এই সুপার সাইক্লোনের ধাক্কায় বিপর্যস্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের পর কেটে গিয়েছে ৭২ ঘণ্টা। তারপরেও কার্যত অন্ধকারে ডুবে বিস্তীর্ণ এলাকা। বহু এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। ফলে অমিল পানীয় জলও। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল কলকাতার কসবা, রাজডাঙা, গড়ফা, যাদবপুরের একাংশ, গড়িয়া, বেহালা, খিদিরপুর-সহ একাধিক এলাকা। বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে সিইএসসির বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আগেই করেছিলেন পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরবোর্ডের মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। এবার বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসির কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী এই সংস্থার একাধিপত্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বুধবার সুপার সাইক্লোনের তাণ্ডবে ছারখার কলকাতা, দুই ২৪ পরগণা ও হাওড়া-হুগলির একাংশ। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে রাজ্য। তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কলকাতার। বিদ্যুৎ নেই কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায়। রাস্তায় বেরিয়ে তীব্র বিক্ষোভ দেখান সেইসমস্ত এলাকার বাসিন্দারা। সিইএসসির অভিযোগ, কলকাতার বহু এলাকায় গাছ পড়ে রয়েছে। সেগুলি না সরানো পর্যন্ত বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে না। এদিকে উত্তর ২৪ পরগণার বিস্তীর্ণ এলাকায়ও বিদ্যুৎ না আসায় বিক্ষোভ চলছে। কিছু এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের এলাকায় আগে বিদ্যুৎ দিতে হবে। এ নিয়ে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন এলাকা, টিটাগড়, ব্যারাকপুরের দেবপুকুর, বারাসত-ব্যারাকপুর রোডের রথতলা, কোকাপুর-সহ একাধিক এলাকায় বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হয় দেবপুকুর এলাকায়।
শনিবার রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বাসিন্দাদের একাংশ। টিটাগড় থানার পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে তাঁদেরও অবরোধের মুখে পড়তে হয়। এরপর ব্যারাক কমিশনারেটের র্যাফ গেলে তাঁদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। যদিও এই বিক্ষোভের পিছনে রাজনৈতিক উসকানি আছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বিক্ষোভ দেখালে কাজের গতি কমবে। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা বৃহস্পতিবার থেকেই কাজ করছেন। রাত জেগে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আশঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে। ফলে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে তো সময় লাগবেই।
জেলা প্রশাসনের হিসাব বলছে, উত্তর ২৪ পরগণায় ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ হাজার বিদ্যুতের পোল উপড়ে গিয়েছে। ফলে তা ঠিক করতে কিছুটা সময় লাগবে। তাঁরা এলাকাবাসীর কাছে সেই সময়টুকু চেয়ে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন। তবে কলকাতায় বিদ্যুৎ পরিষেবার বেহালদশা নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কার্যত সিইএসসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘রাজ্যের বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রতিযোগিতা থাকা উচিত বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমিও চাই প্রতিযোগিতা থাকুক। আমাদের আমলে সিএসসি দায়িত্ব পায়নি। সিপিএমের আমলে কেন্দ্রীয় সরকার ওই বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে।’ তবে বিভিন্ন এলাকায় অশান্তি পাকাতে উসকানিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আবেদন, ‘উসকানিতে পা দেবেনা। ধৈর্য ধরুন।’
