বুধবার নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকেই উম্পুনের গতি-প্রকৃতির ওপর নজর রেখেছিলেন তিনি। এই অতি প্রবল সাইক্লোন রাজ্যে মারাত্মক ধ্বংসলীলা চালানোর পরই দ্রুত তার মোকাবিলার প্রক্রিয়া শুরু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে যেমন ক্ষয়ক্ষতির বিশদ রিপোর্ট চাইলেন, তহবিল ঘোষণা করলেন। তেমনি প্রতিটি পাই-পয়সা হিসেব করে খরচ করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নবান্নে বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ও আমলাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনা সামলাতে যে তহবিল ঘোষণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার মধ্যেই উম্পুনের প্রবল আঘাতে যে পরিস্থিতি তৈরি হল, তাতে কেন্দ্রের সাহায্য দরকার বলে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন। প্রধানমন্ত্রীকে পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই সেই আহ্বানে সাড়াও দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রসঙ্গত, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, সে কথা বুধবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন। জানা গিয়েছে, দুই ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, ফোন পরিষেবা প্রায় বিকল, অজস্র গাছ এবং বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে রয়েছে। আর এখনও আকাশ মেঘে কালো এবং ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় হেলিকপ্টার নিয়ে পরিদর্শনও প্রায় অসম্ভব। তাই গতকাল মমতা জানিয়েছেন, আবহাওয়ার একটু উন্নতি হলে শনিবারই তিনি পরিদর্শনে যাবেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, উম্পুনের তাণ্ডবে রাজ্যে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ১৫ জন কলকাতার। উত্তর ২৪ পরগনায় প্রাণ গিয়েছে ১৭ জনের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর এলাকায় ৬, ডায়মন্ড হারবারে ৮ এবং সুন্দরবন এলাকা থেকে ৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে বলে তিনি জানান। পূর্ব মেদিনীপুরে ৬, হুগলির চন্দননগরে ২ এবং নদীয়ার রানাঘাটে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মৃতদের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন তিনি।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্রুত সে সমস্যা মেটানোর নির্দেশও দিয়েছেন প্রশাসনকে। যে সব নদীবাঁধ এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোরও দ্রুত মেরামতির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রশাসনকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘সারানো রাস্তা যেন তিন বছর স্থায়ী হয়, সেটা দেখতে হবে।’
ত্রাণ ও পুনর্গঠনের জন্য যে টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে, তা নিয়ে কোনও রকম অনিয়ম বা অপব্যয় যে বরদাস্ত করবেন না তিনি, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘দেখেশুনে টাকা খরচ করতে হবে। কোনও ভাবেই অকারণে টাকা খরচ করা যাবে না।’ উম্পুনের ক্ষয়ক্ষতি মেটানোর জন্য রাজ্যে হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করছে বলেও গতকাল জানিয়েছেন তিনি।