তিনি বাংলার বাসিন্দা শুনেই সাহায্য করতে অস্বীকার করেছিল ভিন রাজ্যের পুলিশ। কিন্তু থোড়াই কেয়ার। বাড়ি ফেরার তাগিদ ও অদম্য জেদের ওপর ভর করে সন্তান কোলে হেঁটে হেঁটেই ২১২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফেললো এক পরিযায়ী শ্রমিক দম্পতি। হ্যাঁ, বছর দুয়েকের সন্তানকে কোলপাঁজা করে হেঁটে হেঁটেই মুম্বই থেকে ধূপগুড়ি পৌঁছে নজীর গড়লেন কোচবিহার জেলার ঘোকসাডাঙা এলাকার বাসিন্দা মোমিনুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী।
জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে নিজের স্ত্রী ও পুত্র সন্তানকে নিয়ে মুম্বইতে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন মোমিনুর। সেখানে গিয়ে অর্থ উপার্জন করে কোনও রকমে দিনযাপন করছিলেন তাঁরা। আচমকাই শুরু হয়ে যায় লকডাউন। প্রথমে তাঁরা ভাবেন কিছুদিন পর লকডাউন উঠে যাবে। কিন্তু হয় উল্টো। ক্রমাগত বাড়তে থাকলে লকডাউনের সময়সীমা। তার জেরে বন্ধ হয়ে যায় কাজও। কাজ না থাকায় কার্যত না খেয়ে মরবার যোগাড় হয় তাঁদের।
এরপরই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে কপালে যাই থাকুক না কেন পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরবেন তাঁরা। সেই মতো হাঁটাও শুরু করেন তাঁরা। টানা দুই সপ্তাহ হেঁটে সোমবার বিকেলে তাঁরা ধূপগুড়ি এসে পৌছান। পায়ে জোর না থাকায় আর পথ হাঁটতে না পেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় চলে যান ধূপগুড়ি থানার গেটে।
মোমিনুর জানান, ১৪ দিন আগে তাঁরা মহারাষ্ট্র থেকে জাতীয় সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে রওনা দেন বাংলার পথে। রাস্তায় বিভিন্ন ক্লাব সংগঠন থেকে তাঁরা খাবার পান। এইভাবে তারা ১৩ দিন পর গত রবিবার মালদায় এসে পৌঁছান। মালদার স্থানীয় ক্লাবের পক্ষ থেকে পুলিশের সাহায্যে নিয়ে রাতে তাঁদের একটি বাসে চাপিয়ে দেওয়া হয়। সেই বাস সোমবার ভোর ৩টে নাগাদ শিলিগুড়িতে এসে পৌছায়। এরপর তারা শিলিগুড়ি থেকে ফের হাঁটা শুরু করে বিকেলে ধূপগুড়ি এসে পৌছান।
মোমিনুরের অভিযোগ, তাঁরা মহারাষ্ট্র পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে গেলে তাঁদের সেখান থেকে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয় আপনি মমতার রাজ্যের বাসিন্দা। তাই আপনাদের আমরা কোনও সাহায্য করতে পারব না। এরপর ধূপগুড়ি থানার ট্রাফিক ওসি অভিজিৎ সিনহা নিজে তৎপরতা নিয়ে তাঁদের খাইয়েদাইয়ে একটি ম্যাটাডোরে চাপিয়ে ঘোকসাডাঙা থানার উদ্দেশ্যে যাবার নির্দেশ দিয়ে রওনা করিয়ে দেন।