২০ লক্ষ কোটির ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্প। অথচ গরিব-নিম্নবিত্ত হোক কিংবা ছোট ব্যবসায়ী— কাউকেই কোনও অনুদান দেওয়া হয়নি। বরং করোনাভাইরাস ও লকডাউনের জেরে আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলায় ঋণ নেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এ বার শুধু সেই সব প্রশ্ন তোলাই নয়, প্যাকেজের অঙ্ক নিয়েও প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কার্যত ভাঁওতা দেওয়ার অভিযোগ তুললেন পি চিদম্বরম।
এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, কেন্দ্রের ঘোষিত প্যাকেজ সব ক্ষেত্রকেই হতাশ করেছে। তাঁর মতে, এমন অনেক ঘোষণা করা হয়েছে, যা বাজেটের ব্যয়বরাদ্দে আগেই করা হয়েছিল। নতুন যে সব প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে, তার মোট মূল্য ২ লক্ষ কোটি টাকারও কম বলে দাবি করে তাঁর আর্জি, অন্তত ১০ লক্ষ কোটির প্রকৃত প্যাকেজ ঘোষণা করা হোক।
২০ লক্ষ কোটির প্যাকেজ বলে কেন্দ্র দাবি করলেও চিদম্বরম বলছেন, প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার। তিনি বলেন, ‘এই আর্থিক প্যাকেজ বাজেটের মাত্র ০.৯১ শতাংশ। যে ভয়াবহ আর্থিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এবং সাধারণ মানুষ যে সঙ্কটে পড়েছেন, তার তুলনায় এই প্যাকেজ অপর্যাপ্ত।’ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘আমরা পাঁচ কিস্তির আর্থিক প্যাকেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছি। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের, আর্থিক সংস্থা ও ব্যাঙ্কের সঙ্গে পর্যালোচনা করেছি। তাতে উঠে এসেছে, বাজেটে ব্যয়বরাদ্দের বাইরে মাত্র কয়েকটি খাতেই অতিরিক্ত প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।’ কোন খাতে কত অতিরিক্ত প্যাকেজের ঘোষণা হয়েছে, তাও নির্দিষ্ট করে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন চিদম্বরম।
চিদম্বরমের দাবি, এগুলি ছাড়া সবই বাজেটে ব্যয়বরাদ্দ করা হয়েছিল, অথবা সেগুলির সংযুক্তিকরণ। তাঁর মতে, অতিরিক্ত বরাদ্দ না করা হলে বাজেটের অন্তর্ভুক্ত বিষয় কখনওই আর্থিক প্যাকেজ হিসেবে ধরা যায় না। অধিকাংশ আর্থিক বিশেষজ্ঞ, ব্যাঙ্ক, মূল্যায়ন সংস্থা তাই এই প্যাকেজকে দেশের জিডিপির ০.৮ থেকে ১.৫ শতাংশের মধ্যে রেখেছেন। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তাই বলেছেন, দেশের ১৩ কোটি পরিবার, পরিযায়ী শ্রমিক, কৃষক, ভূমিহীন কৃষিশ্রমিক, কৃষিক্ষেত্রের দিনমজুর, ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক, অসংগঠিত ও অনথিভুক্ত ক্ষেত্রের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং সেই সব প্রতিষ্ঠানে কাজ হারানো শ্রমিকরা, স্বনির্ভর ব্যবসায়ী, ৭ কোটি দোকানদার, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার এবং ৫.৮ কোটি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোগপতিদের সবাই হতাশ হয়েছেন।