প্রথম থেকেই বেসরকারিকরণের দিকে ঝুঁকে মোদী সরকার। দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেই একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির পাশাপাশি রেলেরও আংশিক বেসরকারিকরণ করে ফেলেছে মোদী অ্যান্ড কোম্পানি। এবার করোনা তাদের পক্ষে শাপে বর হল। এই মহামারীর সময়ে বেসরকারিকরণকেই সরাসরি বাঁচার রাস্তা বলে জানিয়ে দিল সরকার! প্রত্যাশা ছিল, করোনায় বিধ্বস্ত অর্থনীতি আর বিপর্যস্ত দরিদ্রদের ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে ত্রাণ প্রকল্পে নগদ জোগাবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। সরাসরি টাকা দেবেন তাঁদের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু সে পথে না হেঁটে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার রাস্তা আরও খুললেন তিনি।
রবিবার পঞ্চম দফার ত্রাণ প্রকল্পের ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোনও ক্ষেত্রকে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জন্য তুলে রাখার দিন শেষ। কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে অন্তত একটি এবং সর্বোচ্চ চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থাকবে। বাকি সব ক্ষেত্রে শুধুই বেসরকারি পুঁজি। অধিকাংশ ট্রেড ইউনিয়ন, এমনকি সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-ও এ নিয়ে সরকারকে তোপ দেগেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাঙ্কিং যদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের তালিকা থাকে, তা হলে কি দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থাকবে মাত্র চারটি? আবার বিমান পরিবহণ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের তালিকায় এলে কি বদলাবে এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির পরিকল্পনা?
অর্থনীতিবিদদের একাংশের জিজ্ঞাসা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণের পরিকল্পনাকে ত্রাণ প্রকল্পে ঠাঁই দেওয়া হল কেন? এমনও তো নয় যে, এখনই বেশ কিছু সংস্থা বেচে সেই টাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার কাজে ঢালছে কেন্দ্র! যখন বহু বেসরকারি সংস্থার নাভিশ্বাস দশা, ছাঁটাই হচ্ছেন বহু কর্মী, তখন এমন ঢালাও বেসরকারিকরণ কেন? আইডিএসকে-র অধ্যাপক শুভনীল চৌধুরীর কথায়, ‘করোনা-সঙ্কটে দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষগুলির বিপুল ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই করল না সরকার! উল্টে বেসরকারিকরণের কথা বলা হল! লকডাউনের সময়ে কোনও বিতর্ক, আলোচনা ছাড়া এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ কী?’