গত সপ্তাহে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে এসে দেশবাসীর জন্য একটি প্যাকেজের ঘোষণা করেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় সেই আর্থিক প্যাকেজের নামে এবার বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে কেন্দ্র সরকার। অর্থমন্ত্রীর আজকের সাংবাদিক বৈঠকের পর সেটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
পঞ্চম দফায় সাংবাদিক বৈঠক করে এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেন, ‘নতুন আত্মনির্ভর ভারত দাঁড়িয়ে থাকবে পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইস পলিসির উপর। স্ট্র্যাটেজিক সেক্টরে ও সরকারি ক্ষেত্রেও প্রাইভেট সেক্টরকে স্বাগত জানানো হবে।’ আর নির্মলার এই ঘোষণার পরই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সরকারি ক্ষেত্রগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যদিও আরও বলেন, ‘রাজ্যগুলিকে ইতিমধ্যেই ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলি টানা ৩ সপ্তাহের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ওভারড্রাফট করতে পারবে। রাজ্যগুলি ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেওয়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। জিডিপি-র নিরিখে ৩ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ ঋণ নেওয়ায় ছাড়। ফলে ৪.২৮ লক্ষ কোটি টাকা রাজ্যগুলি বাজার থেকে ঋণ নিতে পারবে।’
২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ সংক্রান্ত চতুর্থ দফায় বরাদ্দ ঘোষণা করতে গিয়ে গতকালের বৈঠকে এই বেসরকারিকরণকেই পাখির চোখ করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। এর অন্যথা হল না রবিবারেও। এদিন তিনি জানিয়েছেন, কয়লা, খনিজ উত্তোলন, বিদ্যুৎ এবং বিমানবন্দরের মতো ক্ষেত্রে সংস্কার হতে চলেছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে বেসরকারি পুঁজির দরজা খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৭৪ শতাংশ করা হয়েছে।
কেন্দ্রে দ্বিতীয় দফায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতা দখলের পরে ধাপে ধাপে বহু ক্ষেত্রেই বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির সংযুক্তিকরণ ও পেট্রোলিয়াম, শিপিং কর্পোরেশন, কন্টেনার কর্পোরেশন-সহ রত্ন সংস্থাগুলির সরকারি অংশীদারিত্ব কমিয়ে ফেলা তার অন্যতম অঙ্গ ছিল। কয়লা, খনিজ উত্তোলন, প্রতিরক্ষা, বিদ্যুতের মতো ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছিল। চলতি করোনা সংকটের ‘সুযোগে’ সেই কাজটাই যেন সেরে ফেললেন নির্মলা সীতারমণ।