আগেই প্রশাসক গোষ্ঠী বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বোর্ডকে পুরসভার কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের সিঙ্গল বেঞ্চ। তারপর সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায় বহাল রেখেই বোর্ডের কার্যকালের মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চ। অর্থাৎ কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ বিষয়ে হাইকোর্টে যে মামলা উঠেছিল তাতে প্রথম থেকেই জয় হয়ে আসছে রাজ্য সরকারের। শুক্রবারও তার ব্যতিক্রম হল না। কলকাতা পুরসভার প্রশাসক নিয়োগ বিষয়ে হাইকোর্টে মুখ্য বিচারপতির কোর্টে খারিজ হয়ে গেল বিজেপির দায়ের করা জনস্বার্থ মামলা।
প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এটা কোনও জরুরি মামলা নয়। তাই আগের যে এজলাসে এই সংক্রান্ত শুনানি হচ্ছে সেখানেই আবেদন করতে হবে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় এই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন। গতকাল এ নিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশ্যে ক্ষোভ উগরে দেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘আমাকে দেখতে আপনাদের পছন্দ না-ই হতে পারে। আমার জন্ম আমার হাতে নয়। আমার কর্ম আমার হাতে। আমি হাকিমের ঘরে জম্মেছি সেটা আমার দোষ নয়। আজ অন্য পরিবারে জন্মালে আমার নাম ববি দে হতে পারত। আমার কাজই আমার আসল পরিচয়। প্রত্যেকদিন মামলা করে যে অসভ্যতামি হচ্ছে তা বন্ধ হওয়া দরকার।’
তাঁর সাফ কথা, ‘ববি হাকিম সরে যেতেই পারে। কিন্তু তারপর পুরসভার কাজ কে দেখবে? একজন জনপ্রতিনিধির থেকে কে বেশি মানুষের অসুবিধা বুঝবে। কেই বা সেই অনুযায়ী প্রত্যেকটি বোরো ঘুরে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবে। একজন অফিসার কাজে দক্ষ হতে পারেন। কিন্তু তাঁর পক্ষে এগুলো করা সম্ভব হয় না।’ উল্লেখ্য, ভোট না হওয়া পর্যন্ত কলকাতা পুরসভার কাজ দেখভালের জন্য প্রশাসকমণ্ডলী তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বর্তমান মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেই।
রাজ্য সরকারের সেই সিদ্ধান্তকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন শরদ কুমার সিং নামে কলকাতার এক বাসিন্দা। প্রথম শুনানিতে, কলকাতা পুরসভার বোর্ডকে ‘বোর্ড অফ কেয়ারটেকার’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় আদালতের তরফে। সেই নিরিখে কলকাতা পুরনিগমের প্রশাসনিক বোর্ডকে চার সপ্তাহের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ। এই মামলার রায় শোনানোর পরেই সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন মামলাকারী।
সেই মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ড গঠনে ৬৩৪ ধারার অপব্যবহার করেছে সরকার। কিন্তু ৮ জুনের পরিবর্তে ২০ জুলাই পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন প্রশাসকরা। এরপর ফের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মুখ্য বিচারপতির কোর্টে মামলা দায়ের করেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মামলাও খারিজ করে দেয় আদালত।