পেটে খিদের জ্বালা। লকডাউনে বন্ধ কাজ, তাই বন্ধ রোজগার। কিন্তু বাড়ি তো ফিরতে হবে! তাই কোনও দিক না ভেবে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে শুরু হয়েছিল পথচলা। অতিক্রম করতে হবে ১৩০০ কিলোমিটার। কোনও দিন খাওয়া জুটেছে, কোনও দিন জোটেনি। তার উপর পরিবারের এক সদস্য মাঝরাস্তায় পড়ে গিয়ে ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পান।
১৭ জনের একটি পরিবার পাঞ্জাবের লুধিয়ানা থেকে মধ্যপ্রদেশের সিংগ্রাউলি যাওয়ার জন্য পথ চলতে শুরু করেন দিন ১৫ আগে। মাঝপথে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় পরিবারের এক সন্তান। না আছে চিকিৎসা করানোর টাকা, আর না আছে সেই পরিস্থিতি। ফলে সাতপাঁচ ভেবে সকলে মিলে বাঁশ ও খাটিয়া দিয়ে স্ট্রেচার বানিয়ে সেখানে তাকে শুইয়ে ফের হাঁটতে শুরু করেন। কানপুরে পৌঁছনোর পরে অবশ্য পুলিশ তাঁদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
জানা গিয়েছে, লুধিয়ানাতে দিনমজুরের কাজ করতেন ওই পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু লকডাউন, তাই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। খাবারও বেশি ছিল না। টাকা ছিল না। ফলে হেঁটেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সেইমতো ১৫ দিন আগে হাঁটা শুরু করেন। কিন্তু পথেই গুরুতর চোট পায় ওই কিশোর। তাঁকে নিয়ে ফিরতে হবে, তাই নিজেরা স্ট্রেচার বানিয়ে তার উপর ওই কিশোরকে শুইয়ে হাঁটতে শুরু করেন। টানা ১৫ দিন হেঁটে কানপুর পৌঁছন তাঁরা।
লুধিয়ানা থেকে সিংগ্রাউলির দূরত্ব প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার ১৫ দিনে পেরিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। পথে কোনওদিন তাঁদের খাবার জুটেছে, কোনদিন আধপেটা খেয়েই ফের হেঁটেছেন। এরপর এদিন কানপুর পুলিশের চোখে পড়ে কাউকে কাঁধে নিয়ে হেঁটে চলেছেন বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করতেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, ১৫ দিন ভাল করে খেতে পাননি তাঁরা। অনেকের চটিও নেই। ফলে খালি পায়েই পেরিয়েছেন এই দীর্ঘ পথ। এরপর অবশ্য কানপুর পুলিশের তরফে তাঁদের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়। পরিবারের সদস্যদের চটিও কিনে দেয় পুলিশ। এরপর বাড়ি ফেরার জন্য ট্রাকের ব্যবস্থা করা হয়। তাতেই বাকি পথ পাড়ি দেবেন তাঁরা।