চলে গিয়েছে ফার্স্ট ফ্ল্যাশের মরশুম অর্থাৎ চা গাছে প্রথম কচি পাতা আসার সময়। বিশ্ব ব্যাপী যে চায়ের পাতার ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে দার্জিলিংয়ের ফার্স্ট ফ্ল্যাশ টি-র। তবে লকডাউনের জেরে বাগানেই পড়েছিল সেই কচি পাতা। এবার গুরুত্বপূর্ণ সেকেন্ড ফ্ল্যাশের চা পাতা তোলার পালা। তার ঠিক আগেই চা বাগানে ৫০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিল রাজ্য। আর তাতেই স্বস্তি ফিরল উত্তরবঙ্গের ৩০২ টি চা বাগানে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাগান মালিকদের সংগঠন, শ্রমিক-কর্মচারী ও ট্রেড ইউনিয়নগুলি।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছু শর্ত মেনেই চা-বাগানে পাতা তোলা এবং অন্যান্য কাজকর্ম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং জীবাণু মুক্তির ব্যবস্থা করেই পাতা তুলতে হবে। স্থানীয় শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দিয়ে এই কাজ করতে হবে। সোমবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘লকডাউনে বহু ক্ষতি হয়ে গেছে চা শিল্পে। বাগানগুলো অনেকটা এলাকা নিয়ে। তাই এই শিল্পে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করা যায়। পাতা তোলার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা এক মিটারেরও বেশি দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করেন।’
এর আগে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ২৫ শতাংশ শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ততদিনে ফার্স্ট ফ্ল্যাশের পাতা তোলার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরই রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত নেয় ৫০ শতাংশ শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানোর। গতকাল নবান্ন থেকে সেই নির্দেশই এসে পৌঁছোয়। উল্লেখ্য, মাত্র ৩ দিন আগেই চা বলয়ের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে চিঠি লিখেছিলেন চা বাগান তৃণমূল কংগ্রেস মজদুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি মোহন শর্মা। মার্চ মাসেও কয়েক দফা চিঠি লেখেন তিনি। সোমবার মোহন শর্মা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমরা। কর্মী সংখ্যা বাড়ায় এবার আরও ভালভাবে কাজ করতে পারবে বাগানগুলি।’
গোটা উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে থাকে চায়ের উপর। প্রায় ৫ লক্ষ শ্রমিক সরাসরি যুক্ত এই শিল্পের সঙ্গে। পাহাড় থেকে ডুয়ার্স সব জায়গাতেই কাজ প্রায় না থাকায় অসহায় অবস্থায় ছিলেন চা শ্রমিকদের একটা বড় অংশ। সরকারি সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার থেকে সব চা বাগানেই নতুন করে প্রাণ ফিরে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার ডুয়ার্স শাখার সচিব রাম অবতার শর্মার কথায়, ‘মে মাসের প্রায় পুরোটাই সেকেন্ড ফ্ল্যাশের চা পাতা তোলার সময়। এরজন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের শ্রমিক প্রয়োজন। তবে ৫০ শতাংশ শ্রমিকও যথেষ্ট কম হলেও সব চা বাগান নিজেদের সেরা চা পাতা বার করে আনতে পারবে।’