দু’দিন আগেই বয়েজ লকার রুম নামে একটি ইনস্টাগ্রাম চ্যাট গ্রুপে নাবালিকাদের নগ্ন ও বিকৃত ছবি শেয়ার করে তাদের গণধর্ষণের কৌশল ছকতে দেখা গিয়েছে দক্ষিণ দিল্লীর একশোর বেশি স্কুলপড়ুয়াকে। অভিযোগ মিলতেই ইতিমধ্যে সেই ইনস্টাগ্রাম গ্রুপের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে মামলা। দিল্লীর পর এবার কলকাতাতেও যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হচ্ছেন একের পর এক মহিলা। অভিযুক্তদের তালিকায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রাক্তনী এবং বর্তমান ছাত্রের নাম।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ, বন্ধুদের মধ্যে একটি গুগুল ড্রাইভ তৈরি করে, সেখানে আপলোড করা হতো একের পর এক মহিলাদের নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি। দাবি, ওই ড্রাইভটির অ্যাক্সেস ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যেই কয়েক জন যুবকের হাতে। তারা প্রত্যেকেই ঘটনাচক্রে মান বা মডেল অফ ইউনাইটেড নেশনের সদস্য। এই কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো অভিযুক্ত যুবকদের মধ্যে একজন রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ স্তরের নেতার ছেলেও আছেন বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়। সোমবার এই যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে দিনভর সরগরম থাকলো সোশ্যাল মিডিয়া।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে দিল্লিতে ১৫ বছরের এক নাবালিকাকে গণধর্ষণের স্বীকারোক্তিমূলক একটি স্ক্রিনশট। যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি ‘বয়েজ লকার রুম’ নামে গ্রুপের দুই সদস্যের কথোপকথন। ওই স্ক্রিনশট অনুযায়ী, এক সদস্য আরেকজনকে জানাচ্ছে, এক নাবালিকাকে মদ্যপান করিয়ে তারা পাঁচ জন মিলে গণধর্ষণ করেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ করলেই অপর সদস্যকে হুমকিও দেওয়া হয়। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল শুরু পড়ে যায় নেট দুনিয়ায়। আর এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম সরব হন কলকাতার এক মহিলা। জানান, দিল্লীর ধাঁচে কলকাতাতেও এই ধরনের একটি গ্যাং সক্রিয় রয়েছে।
তাঁর অভিযোগ, ২০১৬ সাল থেকে সকলের আড়ালে সক্রিয় এই দলটি। অভিযোগ, সৌরদ্বীপ বসাক নামে এক যুবক প্রথম একটি গুগুল ড্রাইভ তৈরি করেন। সৌরদ্বীপ-সহ আরো বেশ কয়েকজন যুবকের হাতে রয়েছে ওই গুগল ড্রাইভের অ্যাক্সেস। অভিযোগ, একাধিক সময়ে একাধিক বান্ধবীদের কাছে নগ্ন ছবি চেয়ে আবদার আসতো। কখনও আবদার পূরন হলেই সেই ছবি আপলোড করে দেওয়া হতো ড্রাউভে। অ্যাক্সেস থাকা বাকি যুবকরাও এই কেলেঙ্কারিতে যুক্ত বলে অভিযোগ।
শুধু তাই নয়। একটি টুইটার হ্যান্ডেলে লেখা হয়, অতীতে একাধিকবার সে সমস্ত ছবি ব্যবহার করে মহিলাদের হুমকিও দেওয়া হতো। এরপরই মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়ে ওই টুইট। একে একে মুখ খুলতে শুরু করেন একাধিক মহিলা। ক্রমশ জড়িয়ে যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং বর্তমান ছাত্র মিলিয়ে প্রায় সাত থেকে আটজনের নাম। সূত্রের খবর, ভাইরাল হওয়া একাধিক ফেসবুক পোস্টে অভিযুক্তদের তালিকায় নাম থাকা যশ প্রকাশ মজুমদার নামে এক ছাত্র, রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার ছেলে বলে জানা গিয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
এছাড়াও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্ট গুলিতে অভিযুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে ইমন কল্যাণ ঘোষ, উৎসব বিশ্বাস, শ্রেয়ন চট্টোপাধ্যায়, দিব্যজ্যোতি বসাক, অনিরুদ্ধ তালুকদার সহ বেশ কয়েক জনের। তবে সবকটি ফেসবুক পোস্টেই প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সৌরদ্বীপ বসাক নামের যুবককে। জানা গিয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সৌরদ্বীপ। পাশ করেছেন ২০১৮ সালে। যদিও সোমবার সব অভিযোগ অস্বীকার করে পোস্ট করলেও মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলটি নিষ্ক্রিয় করে দেন অন্যতম অভিযুক্ত সৌরদ্বীপ বসাক।