লকডাউনের মধ্যেই রাজস্থানের কোটায় আটকে থাকা পড়ুয়াদের ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য। সেইমত গত সপ্তাহে সরকারের বিশেষ বাসে করে তাঁরা ফিরেও এসেছে। এ বার কেন্দ্রীয় সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদেরও রাজ্যে ফেরার ছাড়পত্র দিয়ে ট্রেনের বন্দোবস্ত করেছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর ফলে বাংলায় এক ধাক্কায় সংক্রমণের হার অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু বাংলার শ্রমিকরা এভাবে রাজ্যের বাইরে থাকুক, সেটি মুখ্যমন্ত্রী নিজেও চাইছেন না।
এমতাবস্থায় নবান্ন চাইছে, কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকদের ফেরানোর আগে সরাসরি রাজ্যের সঙ্গে কথা বলুক। সে ক্ষেত্রে রাজ্য কেন্দ্রের সঙ্গে ‘ফেস টু ফেস’ কথা বলে বুঝে নেবে, কোন রাজ্য থেকে কত শ্রমিককে কখন রাজ্যে ফেরানো হবে। তারপরই রাজ্য নিজের সুবিধা মতো বলে দেবে, কোন রাজ্যের শ্রমিকদের আগে ফেরানো হবে, কোন রাজ্যের শ্রমিকেরা পরে আসবেন। এরফলে ধাপে ধাপে ভিন রাজ্যের শ্রমিকেরা ট্রেনে করে ফিরলে, হাতে পর্যাপ্ত সময়ও মিলবে। এতে সুষ্ঠু ভাবে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা যাবে। আবার একইসঙ্গে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া ও দরকার মতো কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থাও করতে পারবে রাজ্য।
শুধু বাংলাই নয়, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরলে করোনা সংক্রমণ আরও ছড়ানোর আশঙ্কা করছে সব রাজ্যই। এই আশঙ্কা যে কতটা সত্যি, তার প্রমাণ হল, আজ মহারাষ্ট্র থেকে উত্তরপ্রদেশে ফেরা সাত জন দিনমজুরের করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসায়। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের বস্তির এই সব শ্রমিকদের একটি কলেজে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। যাঁরা এঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদেরকেও চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করার কাজ চলছে। কিন্তু আসার সময়ও পথে এঁদের থেকে অনেকের সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, গোটা দেশেই উপসর্গহীন সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি। কোথাও কোথাও তা ৬৯ শতাংশের মতো। ঠিক মতো পরীক্ষা না হলে গ্রামগুলিতেও সংক্রমণের আশঙ্কা ছড়াবে। গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে। স্বাস্থ্যবিদদের আশঙ্কা, এ ভাবে শারীরিক পরীক্ষা ছাড়া ওই কর্মীরা নিজের নিজের রাজ্যে পৌঁছলে, সংক্রমণ দ্রুত ছড়ানোর সম্ভাবনা। সেটা রুখতে গেলে এক ধাক্কায় বিপুল সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা, প্রয়োজনে কোয়ারেন্টাইনের বন্দোবস্ত করতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে। বস্তুত এই কারণেই ধাপে ধাপে শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরাতে চাইছে নবান্ন।