করোনা মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গোটা দেশ জুড়ে লকডাউনের ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই যার মেয়াদ আরও বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে এর জেরে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দৈনিক ৩,২০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখ দেখছে দেশের পরিবহণ শিল্প। দেশে মোট ১.২৫ কোটি হাল্কা ও ভারি বাণিজ্যিক গাড়ি রয়েছে।
এর মধ্যে প্রায় ১২.৫ লক্ষের ওপর গাড়ির ভারতের যে কোনও প্রান্তে পণ্য নিয়ে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। অর্থাৎ, ন্যাশনাল পারমিট রয়েছে এই গাড়িগুলির। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশের বেশি বা প্রায় ১০ লক্ষ বাণিজ্যিক গাড়ি ছোট ব্যবসায়ী বা যাঁদের ১-৫টি ট্রাক রয়েছে।
এর মধ্যে আবার ২০ শতাংশের মালিকই ড্রাইভার। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহণে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি। এর ফলে থমকে পড়ে থাকা ট্রাকের সংখ্যা ৯০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। আর ন্যাশনাল পারমিট পাওয়া ট্রাকের মাত্র ২ লক্ষ রাস্তায় রয়েছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা আতঙ্ক। যে কারণে, ড্রাইভারদের একটা বড় অংশ বের হতে চাইছে না। ফলে যাঁরা নিজেরাই নিজেদের ট্রাক চালান রোজগারের আশায় তাঁরাই শুধুমাত্র গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছে। এর ফলে বিপুল সঙ্কটে পড়েছে এই ক্ষেত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িত প্রায় ২০ কোটি মানুষ।
এ প্রসঙ্গে অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেসের চেয়ারম্যান এস কে মিত্তল বলেন, ‘এমনিতেই ভারতীয় অর্থনীতিতে মন্দার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আর পাঁচটা শিল্পক্ষেত্রের মতো পণ্য পরিবহণ ক্ষেত্রও মার খাচ্ছিল। এর উপরে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।’
লকডাউন উঠলেও এখন যা অবস্থা তাতে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে আগামী দুই ত্রৈমাসিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ করোনাভাইরাসের প্রভাব এবং লকডাউনের জেরে কলকারখানা সবই বন্ধ। এর পরেও ক্রেতা চাহিদা বাড়তে বা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। তার ফলে পণ্য পরিবহণও কমবে, তিনি জানান।
এর সব থেকে বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের ছোট ট্রাক মালিকদের উপর। মিত্তল আরও বলেন, ‘কারখানাগুলিতে উৎপাদন শুরু হতে কমপক্ষে আরও ছ’মাস সময় লাগবে। ক্রেতা চাহিদা তৈরি হতেও একই সময় অপেক্ষা করতে হবে। তারপর পণ্য পরিবহণ একটা মোটামুটি জায়গায় আসবে।’ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট কুলতরন সিং অটওয়ালের কথায়, ‘যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এরপর নগদের জোগান কমবে।’