এখনও পর্যন্ত কোনও ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায়, করোনা সংক্রমণ রোধ করার একটাই উপায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। আর সেই কারণেই প্রায় গোটা বিশ্ব জুড়ে চলছে লকডাউন। কবে তা শেষ হবে কেউই বলতে পারছেন না। এই পরিস্থতিতে বাজার থেকে কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে অত্যাধুনিক মানের গর্ভনিরোধক (কন্ট্রাসেপ্টিভ)। এর ফলে, অল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলির অন্তত ৪ কোটি ৭০ লক্ষ মহিলা ওই সব অত্যাধুনিক গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে পারছেন না। যার পরিণতিতে আর কয়েক মাসের মধ্যে ওই দেশগুলিতে অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্বের শিকার হতে হবে আরও অন্তত ৭০ লক্ষ মহিলাকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের পপুলেশান ফান্ড (‘ইউএনএফপিএ’) ও তার সহযোগী সংস্থাগুলির একটি সমীক্ষা এই উদ্বেগের কথা শুনিয়েছে।
সমীক্ষায় এ-ও জানানো হয়েছে, লকডাউনের সময় এই সমস্যার ফলে অল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলির মহিলারা যেমন পরিবার কল্যাণ কর্মসূচীতে অংশ না নিতে পেরে অনিচ্ছাকৃত মাতৃত্বের শিকার হতে চলেছেন, তেমনই ওই সব দেশে গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনাও বহু গুণ বাড়তে চলেছে। সমীক্ষা বলছে, লকডাউনের আগে পর্যন্ত বিশ্বের অল্প ও মধ্য আয়ের ১১৪টি দেশের প্রায় ৪৫ কোটি মহিলা নিয়মিত ভাবে গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতেন। সমীক্ষাটি চালাতে ইউএনএফপিএ-কে সহযোগিতা করেছে আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাভেনির হেলথ এবং অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
সমীক্ষা জানিয়েছে, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রোখার জন্য বিশ্ব জুড়ে যে লকডাউন চলছে দীর্ঘ দিন ধরে, তার যথেষ্টই প্রভাব পড়বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে। শুধু তাই নয়, এই লকডাউন মহিলাদের ‘জেনিটাল মিউটিলেশন’ বা অস্ত্রোপচার ও অন্যান্য কারণে মহিলাদের যৌনাঙ্গের হানি এবং বাল্যবিবাহ রোখার কাজের গতিও অনেকটাই কমিয়ে দেবে। তার ফলে, আগামী দশকে আরও অন্তত ২০ লক্ষ মহিলার যৌনাঙ্গের হানির আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ১০ বছরে বাল্যবিবাহের ঘটনা বাড়বে আরও অন্তত ১ কোটি ৩০ লক্ষ। ইউএনএফপিএ-র এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর নাটালিয়া কানেম মঙ্গলবার বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, এই অতিমারি লিঙ্গবৈষম্য আরও বাড়াচ্ছে। ৬ মাসের লকডাউন আরও ৩ কোটি ১০ লক্ষ গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা বাড়াবে বিশ্বের ওই সব দেশে। যা প্রতি তিন মাসে বাড়বে অন্তত দেড় কোটি করে।’