মন্দিরে ভগবান, মসজিদে আল্লাহ, চার্চে যিশু এবং ক্রিকেটের বাইশ গজে শচীন তেন্ডুলকর – কথায় আছে, এই কথাটাই ভারতবর্ষের সবথেকে বড় মিথ। কারণ, ভারতীয়দের সুখ-দুঃখে, আড্ডায়-আনন্দে প্রায় সবকিছুতেই রয়েছে ক্রিকেট। আর এই ক্রিকেট মানেই তাঁদের কাছে শচীন তেন্ডুলকর। যিনি উইলো কাঠের টুকরো নিয়ে যখন ২২ গজে নামতেন, তখন গোটা ভারত একলহমায় থমকে যেত। যেন শচীনের একেকটি শটের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেইসময় অন্যকিছু হতেই পারে না। আর আজ সেই শচীনের জন্মদিন। এদিন ৪৭-এ পা রাখলেন ক্রিকেট ঈশ্বর।
অবশ্য গতকালই ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ জানিয়েছিলেন, দেশ তথা পৃথিবীর এমন দুর্দিনে তিনি নিজের জন্মদিন উপলক্ষে কোনো আয়োজন করবেন না। করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব এখন কঠিন সময় পার করছে। এ জন্যই জন্মদিন উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত। এছাড়াও এক ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শচীন ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি।
১৯৭৩ সালের আজকের দিনে মুম্বাইয়ের নির্মল নার্সিংহোমে মারাঠি ঔপন্যাসিক রমেশ তেন্ডুলকর এবং বীমা কোম্পানীর কর্মচারী রজনী তেন্ডুলকর দম্পত্তির পরিবারে জন্ম নেন শচীন রমেশ তেন্ডুলকর। জানা যায়, তখনকার সময়ের বিখ্যাত ভারতীয় সুরকার এবং গায়ক শচীন দেববর্মণের নামানুসারে শচীনের নামকরণ হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হলেও, পড়াশোনায় একেবারেই ভাল ছিলেন না শচীন। ছাত্রজীবনে ৩ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং পরপর তিনবারই ব্যর্থ হয়েছিলেন।
আক্ষরিকভাবে শচীনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘টেন পাশ’। অর্থাৎ ক্রিকেট ঈশ্বর শচীনের কখনো কলেজের চৌকাঠে পা দেওয়ার সুযোগ হয়নি। স্কুলে থাকা অবস্থায় ইচ্ছে ছিল পেস বোলার হবে। একটি পেস বোলিং ফাউন্ডেশনে অংশগ্রহণ করে ফাস্ট বোলার হবার চেষ্টা করেন। তবে নেট অনুশীলনে শচীনের ব্যাটিং ধরন দেখে শচীনের লক্ষ্য বদলে দেন অজি কিংবদন্তী পেসার ডেনিস লিলি। সেদিন লিলির চোখে না পড়লে হয়তো কখনো বোলার হিসেবে ভারতীয় জাতীয় দলে খেলার সুযোগই পেতেন না শচীন।
১৯৮৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল শচীনের। এর পরের গল্পটা তো সবারই জানা। ক্রিকেট অভিধানের প্রায় সব রেকর্ডই নিজের নামের পাশে যোগ করে ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত টেস্ট শচীন খেলেছেন ২০০টি। যাতে ৫৩.৭৮ গড়ে রান করেছেন ১৫ হাজার ৯২১। ৫১টি শতক ও ৬৮টি অর্ধশতকে এই রান করেন লিটল মাস্টার। সর্বোচ্চ ২৪৮ রান। হাত ঘুরিয়ে উইকেটও নিয়েছেন ৪৬টি।
নিজের ক্রিকেট জীবনে ২২ বছর ৯১ দিন সর্বোচ্চ ৪৬৩ টি ওয়ানডে খেলে করেছেন ১৮ হাজার ৪২৬ রান, যা কিনা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। হয়েছেন সবচেয়ে বেশি ম্যান অব দ্য ম্যাচ (৬২ বার), সবচেয়ে বেশি ম্যান অব দ্য সিরিজ (১৫ বার)। ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৪৯ শতকের সাথে ৯৬ অর্ধশতক। তবে তাঁর আফসোসের রেকর্ডও কিন্তু কম নয়। ৯০-র ঘরে পৌঁছেও সবচেয়ে বেশি (১৮ বার) আউট হওয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। যার মধ্যে ৯৯ রানে আউট হয়েছেন ৩ বার! নাহলে শচীনের শতকের সংখ্যাটা আরও বেশি হতেই পারত।
এছাড়াও, শচীন নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মোট ছয়টি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিয়ারের প্রাপ্তির খাতাটা ষোল কলায় পূর্ণ করেন ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি। এরপর ২০১২ সালে ওয়ানডে ও ২০১৩ সালে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। কথায় আছে, ভারতীয় ক্রিকেট দলের ১০ নম্বর জার্সি গায়ে শচীন রমেশ তেন্ডুলকর নামে কোনও ক্রিকেটার কোনোদিন ব্যাটিং করেননি। ওই জার্সি গায়ে চাপিয়ে ব্যাট করতে নামতেন স্বয়ং ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’ শচীন তেন্ডুলকর।