রাজ্যে করোনা পরিস্থিতিতে প্রথম থেকেই ‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। করোনা মোকাবিলায় ২০০ কোটির ফান্ড থেকে সরকারি হাসপাতালে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ, বাজারের গিয়ে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বোঝানো সবটাই নিজের হাতে দায়িত্ব নিয়ে করেছেন তিনি। তেমনি লকডাউনের মধ্যে রাজ্যের কেউ যাতে অভুক্ত না থাকে, সেজন্য রেশনে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য প্রদানের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। আর এতেই ব্যাপক উপকৃত হয়েছেন গোটা পুরুলিয়া জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শবর উপজাতির মানুষরা।
রমাইগড়া, অকরবাঁধ, হলুদবনি, গুড়ুর, হেরবনা- তালিকা অনেক বড়। বনমহল পুরুলিয়া জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আদিম জনজাতি শবরদের ১৬৪টি টোলা। কোনওটা জঙ্গলের কাছে। কোনওটা আবার একেবারে ফাঁকা জায়গায় সাধারণ জনবসতি থেকে অনেকটাই দূরে। টানা প্রায় তিরিশ দিনের লকডাউনে এরা সকলেই উপার্জনহীন। কিন্তু তা সত্ত্বেও টোলাতে ভরদুপুরে মিলছে ধোঁওয়া ওঠা ভাতের গন্ধ। সৌজন্যে রাজ্য সরকার। প্রশ্ন ছিল, চাল–ডাল আছে তো? খাবারের কোন সমস্যা নেই তো? প্রশ্নকর্তা জেলাশাসককে একেবারে দুয়ার থেকে উঠোনে নিয়ে গিয়ে শবর মহিলা বললেন, ‘ওই দেখ, ভাত ফুটছে।’
দেখা গেল, উনুনে ফুটছে ভাত। আর তার পাশেই খালি গায়ে থালা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তিন শবর বালক। ভাতের হাড়ি নামলেই এই উঠোনেই টালির আচ্ছাদনে খেতে বসবে ওরা! একদিকে গণবন্টনের রেশন। সেইসঙ্গে মিড-ডে মিলের চাল, আলু। তারপর আবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে সহায়তা। সেইসঙ্গে পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ত্রাণ তো রয়েইছে। ফলে উপার্জনহীন হয়েও এই লকডাউনে চিন্তা নেই ভানুমতি শবর, বুদ্ধেশ্বর শবরদের। কিন্তু মন খারাপ একটাই কারণে। শিকারে যেতে পারছেন না তাঁরা।
বান্দোয়ানের গুড়ুর গ্রামের বুদ্ধেশ্বর শবরকে জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জিজ্ঞেস করছিলেন ঘরে খাবারের কোনও অভাব নেই তো? স্কুলের বাচ্চাদের মিড ডে মিলের চাল-আলু দিয়ে গিয়েছে তো? ঘরের দরজার দিকে হাত তুলে দেখালেন বুদ্ধেশ্বর। চালের বস্তা ও তার পাশে মেঝেতে থাকা প্রায় চার-পাঁচ কেজি আলু দেখে খানিকটা স্বস্তি পেলেন তিনি। তবে চাল, ডাল, আলু দিয়ে থেমে নেই প্রশাসনের টিম। অভাব ঘুঁচিয়ে হাতে অর্থ দিতে টোলায় টোলায় শিবির
করছে। সেই শিবিরেই জাতিগত শংসাপত্র দিয়ে ষাট বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জয়বাংলা পেনশন প্রকল্পের আওতায়-ও আনছেন বিডিওরা। যে কারণে মমতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ এই শবররা।