কলকাতা ও বাগডোগরা বিমানবন্দরে কেন্দ্রীয় দল পা রাখার পনেরো মিনিট আগে তা নবান্নকে জানানো হয়েছিল। তা নিয়ে রাজ্য ক্ষোভ উগড়ে দিলেও রাজ্যে করোনা-পরিস্থিতি দেখতে রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় দলকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হবে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। বুধবার তিনি জানান, কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রের যে দু’টি দল রয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। দলগুলি কোথাও ঘুরতে চাইলে ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। তবে রিপোর্ট তৈরির ব্যাপারে রাজ্য যে কেন্দ্রীয় দলের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা আশা করছে, এ দিন তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে কলকাতা ও উত্তরবঙ্গে দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের আসা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল রাজ্য। আর তারপর দলের প্রতিনিধিরা এই বলে অভিযোগ করেন যে, রাজ্য প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। এ নিয়ে দিল্লীতে রিপোর্ট পাঠান তাঁরা। তার পর মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লার চিঠি আসে রাজীব সিনহার কাছে। তাতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৩৫ নম্বর ধারা ও সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে চলতে রাজ্য বাধ্য। রাতে কেন্দ্রকে পাঠানো তাঁর জবাবে মুখ্যসচিব জানিয়ে দেন, পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতাই করা হচ্ছে।
ওই চিঠি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব বলেন, ‘বাংলার মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে রাজ্য প্রশাসন বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ও সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে চলবে।’ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আশা করব ওই দলে যে প্রতিনিধিরা আছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার ফায়দা নিতে রাজ্য সক্ষম হবে।’ তবে প্রশাসনিক ভাবে কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে সহযোগিতার পথে হাঁটলেও রাজনৈতিক ভাবে যে তারা এখনও কেন্দ্রের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট, তা গতকাল বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁর চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের যে পর্যবেক্ষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নবান্ন। তাদের মতে, করোনা সংক্রমণ নিয়ে প্রকাশিত খবর ও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের রাজ্যে ফেরত পাঠানো নিয়ে দায়ের হওয়া মামলার প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত বলেছিল, কেন্দ্রের নির্দেশ রাজ্যগুলি মেনে চলতে বাধ্য। এর সঙ্গে রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর কোনও সম্পর্ক নেই। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের অপব্যবহার করছে বলেই নবান্নের অভিমত।
মুখ্যমন্ত্রী গতকাল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ তা ছিল পরিযায়ী শ্রমিক এবং ভুয়ো খবরের ব্যাপারে। এর বেশি কিছু বলব না। খুঁজে বের করুন কী চলছে, কী হচ্ছে।’ আর মুখ্যসচিবের কথায়, ‘(ওঁরা) যাঁদের সঙ্গে ইচ্ছা কথা বলতে পারেন। নেগেটিভ বা পজিটিভ কী স্টোরি তাঁরা সংগ্রহ করবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। তবে আমরা বিশ্বাস করি না যে, এক জন সরকারি অফিসার নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন না। রাজ্য বা কেন্দ্র, যারই দল হোক না কেন, আশা করি নিরপেক্ষতা থাকবে। কেন্দ্রীয় দলও আশা করব নিরপেক্ষ অবস্থান নেবে রিপোর্ট তৈরির সময়।’