গত পরশু, অর্থাৎ ২০ এপ্রিল রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। সেদিন সকাল ১০.১০-এ, একটি মালবাহী বিমানে দিল্লী থেকে কলকাতায় এসেছেন তাঁরা। কেন্দ্রের তরফে তাঁদেরকেই বাংলার সাতটি জেলার কোভিড -১৯ পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য পর্যবেক্ষণ করতে পাঠানো হয়েছিল। কাগজে কলমে যা দেখে মনে হবে কোথাও লুকোনোর কিছু নেই, এটি একটি দৈনন্দিন জনস্বাস্থ্য অনুশীলন। কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল একটি বিদ্বেষপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ। এমনটাই মত তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে নিয়ে বিমানটি অবতরণের ঠিক তিন ঘন্টা পরে বেলা দেড়টা নাগাদ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে বলেছিলেন যে আইএমসিটি পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায়, রাজ্য সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার কথা ছিল আইএমসিটি-র। কিন্তু, এই দল রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ না করেই এখানে চলে এসেছে।
তিনি বলছেন, যখন বাংলা-সহ দেশের অন্য রাজ্যগুলি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিরোধীদের দ্বারা চালিত রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রত। এটি কেবল মাত্র হতাশাজনক নয়, একেবারে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ। আমরা কি এই পরিস্থিতিতে রাজনীতি বন্ধ রাখতে পারি না? নাকি, বিজেপি ২০২১-এ বাংলার বিধানসভা নির্বাচন নিয়েই চিন্তিত, যার এখনও এক বছর দেরি আছে?
কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলকে বাংলার সাতটি জেলা- কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, মেদিনীপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কালিম্পংয়ে পাঠানো হয়েছে। এই সাতটি জেলায় মোট ২২৪ টি কেস রয়েছে। বাংলায় চারটি নোটিফায়েড হটস্পট রয়েছে, কিন্তু সেখানে পাঠানো হয়েছে সাতটি জেলা পরিদর্শনে। দার্জিলিংয়ে কেবল তিনটি কেস রয়েছে। এখানে সর্বশেষ পজিটিভ কেসটি পাওয়া গিয়েছিল গত ১৪ এপ্রিল। কালিম্পংয়ের সর্বশেষ পজিটিভ কেসটি ২ এপ্রিল এবং জলপাইগুড়িতে সর্বশেষ পজিটিভ কেসটি পাওয়া গিয়েছিল ৪ এপ্রিল। তাঁর প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল কোন যুক্তি অনুসরণ করছে? কোন কোন বিষয় পর্যালোচনার ভিত্তিতে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন? একইসঙ্গে মোদী-শাহকে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন, দয়া করে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার।
ডেরেক মনে করেন যে, রাজ্যের অধিকার খর্ব করার উদ্দেশ্যেই ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৫-এর অপব্যবহার করা হয়েছে। দেশের এমন মহামারির সময়ে আইএমসিটি-র অযাচিত আগমন হল, যখন আইসিএমআর-এর পাঠানো ত্রুটিপূর্ণ টেস্টিং কিটের কারণে সেগুলির ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এটা দেখেই পরিষ্কার যে, বিজেপি বাঙালির জীবন নয়, তাঁদের ভোট নিয়েই বেশি চিন্তিত।
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন যে, ‘মনে রাখবেন, অন্যান্য সমস্ত রাজ্যে, বিধানসভা নির্বাচনগুলি হয় সবে শেষ হয়েছে অথবা কয়েক বছর আগে হয়ে গিয়েছে। তামিলনাড়ুতে নির্বাচন ২০২১ সালে কিন্তু সেখানে বিজেপির বন্ধু সরকার। একমাত্র বিধানসভা নির্বাচন বাকি রয়েছে বাংলায়। তাই হয়রানির শিকার হচ্ছে আমাদের রাজ্য। আর কলকাতার রাজভবন ‘শাখা’য় বসে এই ব্যাপারটাকে আরও জোরালো করছেন আমাদের রাজ্যের রাজ্যপাল। সারাদিন টিভির সামনে বসে তিনি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের সমালোচনা করছেন এবং তাঁর দফতরের রাজনীতিকরণ করেছেন। কিন্তু বিজেপির এই নোংরা রাজনীতি বাংলার মানুষ বেশিদিন সহ্য করবে না।’