ভাত আর আলুপোস্তা খেয়ে, অখ্যাত কোন কবির কবিতা পড়তে পড়তে জিরিয়ে নাও বইপাড়া। ঘুম ভাঙলে আমি ঠিক ফিরবো তোমার কাছে কোন পান্ডুলিপি নিয়ে। কবি ফিরবে প্রকাশকের কাছে পাওনা বুঝে নিতে। অক্ষর ফিরবে ছাপাখানায়।
বিশ্রাম নাও মহানগরীর রাজপথ। গাড়ি, ঘোড়া, মিনিবাস বুকে জেগে থেকেছো এতোকাল। নিয়ন বাতি ক্ষত চিনিয়ে দিয়েছে রোজ কিন্তু আমরা দৌড়ে গেছি, লাফিয়ে বাসে উঠেছি, পা পিছলে এ শহরেই মারা গেছি অঘটন ঘটিয়ে।জীবনানন্দ জানে। রক্তদাগ, গ্লানি, পেট্রোল লিক হয়ে চাপ চাপ পোড়া গন্ধ এই সুযোগে জামা থেকে ধুয়ে নাও দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজ। আমি সুসজ্জিত তোমাতে ফিরবো।
আমি ফিরবো মহামারী শেষে, দক্ষিনাপনের
ফুচকা স্টলে, ডালহৌসির ওই রাস্তার চাউমিনে, সেক্টর ফাইভের পাশে ফের গাড়ি দাঁড় করিয়ে দুজনে দুদন্ড প্রেম করবো অফিস ফেরত। আমি বরাবরের মতো আবার ও এক ঘন্টা অপেক্ষা করবো মেট্রো চ্যানেলের মুখে, তুমি ফের দেরি করো।
প্রিয় ময়দান, শেকড় বাকড় বাড়তে দাও নিজের, এই যে সময়টা পেলে৷ আচ্ছা ভিক্টোরিয়ার ওই পরীর গায়ে গাছ গাছালি পৌছবে তোমার? ফের ব্রিগেডের ধুসর সবুজে ঢেকে দিতে পারবে? রেডরোডে শ্যাওলা জমাতে পারবে? এ কদিন প্রকৃতি কুচকাওয়াজ করুক একের পর এক কংক্রিট দখলের অহংকারে।
পায়ের কাছে যে মানুষগুলো কিলবিল করে ওরা বাড়ি ফিরে গেছে। পায়ে আরাম দাও শহীদ মিনার, ঘুমিয়ে থাকো হাওড়া ব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং, গার্ডরেল আর ব্যারিকেড গুলো। আমরা ফিরবো আন্দোলনে, অনশনে। আমরা ফিরবো মধুসূদনের সমাধিস্থলে, আমরা ফিরবো বড়বাজারের ক্যাকোফোনিতে।
৩০০ বছরের ঝড়-ঝাপ্টা উপেক্ষা করে হাঁটতে, হাঁটতে, হাঁটতে, হাঁটতে এবার তিষ্ঠ হও ক্ষণকাল! কল্লোলিনীর শ্বাস প্রশ্বাস জুড়ে নাও শস্যক্ষেত, পাখির কাকলি, জলপাই রঙের ঘনসবুজ বন-লতাপাতা আর ধূসর মাটির ধূলিকণা। আমরা ফিরবো মহামারী শেষে দ্রোহ আর দূষণে। হুগলি নদীর জল ফের ঘোলা হবে, দেওয়াল ঢেকে দেওয়া হবে স্লোগানে স্লোগানে, বিজ্ঞাপনে মুড়ে ফেলা হবে ফ্লাইওভার, শপিং মল, সিনেমা হল। আমরা ফের ফিরবো ধূসর বিষন্ন গোধূলিতে ধর্মতলার কোন পানশালায়, আমরা ফিরবো গড়িয়াহাটার ওই দাবার আড্ডায়৷
কয়েক হপ্তা ঘুমিয়ে কাটাও বাউন্ডুলে শহর তারপর ফের কোন বেহেড মাতাল তোমার রাত শাসন করবে৷ ডিপো থেকে বেরিয়ে আসবে ট্রাম, হাড়কাটায় ফের জুঁই ফুল কেনা হবে, হলুদ ট্যাক্সি ফের না বলবে ভরা সন্ধেবেলা, অটো খুচরো পয়সায় ভাড়া দিতে বলবে, বৃষ্টি ভিজে কোন মেয়ে আশ্রয় নেবে বহুদিন আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোন গ্ৰামাফোন দোকানের শেডে। মৃত কবিরা ফের কফিহাউসে নেমে আসবে। উদ্দাত্ত কন্ঠে শক্তি পড়া হবে গোরোস্থানে বসে।
“কাছে এলে মুছে যায় স্মৃতির পাথর হতে তার, ছায়া, রোদ মুছে দেয়, ভিতরে উত্তাল করে রাখে, কলকাতা কলকাতা তার জগন্ময় দুঃখ ও মাধুরী।”
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত