কথায় বলে, একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর। একই অবস্থা এখন বিশ্ব অর্থনীতিতেও। কারণ এক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন যে, একা মন্দায় রক্ষে নেই, করোনা দোসর। হ্যাঁ, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে গোটা বিশ্বেই আর্থিক বৃদ্ধির হার ব্যাপক ভাবে কমবে, এমন আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু সেই ধাক্কা যে বিশ্বকে নিশ্চিত অর্থনৈতিক মন্দার দুঃস্বপ্ন দেখাবে, তা আগে থেকে আন্দাজ করা যায়নি। কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে অর্থনীতি— এবার তার একটা ছবি তুলে ধরল ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) বা আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার। দেশভিত্তিক প্রস্তাবিত জিডিপি বৃদ্ধির হার প্রকাশ করল আইএমএফ।
২০১৯ এ কোন দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কেমন ছিল, ২০২০-তে কেমন হতে পারে এবং করোনা-উত্তর সময়ে অর্থনীতি বৃদ্ধির হার কেমন হতে পারে, তার আগাম পূর্বাভাস দিল আইএমএফ। তাতে দেখা যাচ্ছে, উন্নত ও উন্নয়নশীল অধিকাংশ দেশেরই ২০২০ সালে ঋণাত্মক বৃদ্ধির সম্ভাবনা। দেশভিত্তিক ছাড়া বিশ্ব অর্থনীতির একটা দিকনির্দেশও রয়েছে আইএমএফ-এর এই পূর্বাভাসে। তাতে ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ২.৯ শতাংশ। সেখান থেকে এ বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সেই হার নেমে যেতে পারে ঋণাত্মক বৃদ্ধিতে (-৩ শতাংশ)। তবে ২০২১ সালে বৃদ্ধির হার হতে পারে ২০১৯-এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫.৮ শতাংশ।
উন্নত দেশগুলির মধ্যে আমেরিকায় ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ২.৩ শতাংশ। ২০২০ সালে সেই হার হতে পারে -৫.৯ শতাংশ। ২০২১ সালে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই বৃদ্ধি হতে পারে ৪.৭ শতাংশ। ইউরোপের মধ্যে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। ফলে এইন্সব দেশে অর্থনীতিতেও তার ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে আইএমএফ। ২০১৯ সালে বৃদ্ধি ছিল ১.২ শতাংশ। ২০২০ এবং ২০২১ সালের পূর্বাভাসে সেই হার হতে পারে যথাক্রমে -৭.৫ শতাংশ এবং ৪.৭ শতাংশ।
আবার জাপানে করোনা ভাইরাসের বিরাট প্রভাব না থাকলেও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। ২০১৯-এ জাপানে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ০.৭ শতাংশ। ২০২০ সালে -৫.২ শতাংশ। ৩ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি হতে পারে ২০২১ সালে। অন্যদিকে, ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলি বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হলেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ যেখান থেকে ছড়িয়েছিল বলে ধরা হচ্ছে, সেই চীনের অবস্থা কিন্তু ততটা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের। এই পরিস্থিতিতেও চীনের জিডিপি বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হবে না এ বছর।
২০১৯ এ চীনে বৃদ্ধির হার ৬.১ শতাংশ। এ বছর সেটা নেমে আসতে পারে ১.২ শতাংশে। আর ২০২১-তে আবার পৌঁছে যেতে পারে ৯.২ শতাংশে। আবার চীনের থেকেও ভারতের অবস্থান ভাল জায়গায় থাকবে বলেই মত আইএমএফ-এর। ২০১৯-এর জিডিপি বৃদ্ধির হার ৪.২ শতাংশ থেকে নেমে পৌঁছে যেতে পারে ১.৯ শতাংশে। তবে অধিকাংশ দেশেই এ বছর ঋণাত্মক বৃদ্ধির পূর্বাভাস হলেও ভারতে তা হবে না বলে মত আইএমএফ-এর। ২০২১ সালে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে ৭.৪ শতাংশ।
রাশিয়ায় ২০১৯ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ১.৩ শতাংশ, এ বছর সেটা দাঁড়াতে পারে -৫.৫ এবং ২০২১-এ হতে পারে ৩.৫ শতাংশ। সৌদি আরবের জিডিপি এ বছর নেমে যেতে পারে -২.৩ শতাংশ পর্যন্ত। ২০১৯ সালে ছিল ০.৩ শতাংশ এবং ২.৯ শতাংশ হতে পারে ২০২১ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১৯ এ জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ০.২ শতাংশ। সেখান থেকে চলতি বছরে নামতে পারে -৫.৮ শতাংশে। আগামী বছরের সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার ৪.০ শতাংশ। অন্য দিকে ব্রাজিলে গত বছরের ১.১ থেকে জিডিপি বৃদ্ধির হার নামতে পারে -৫.৩ শতাংশ। ২০২১ সালে হতে পারে ২.০৯।
অন্যদিকে, এই তালিকায় কার্যত সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ৭.৯ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি হয়েছিল ২০১৯ সালে। এ বছর করোনার প্রভাবের মধ্যেও সেই হার ২ শতাংশ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবে আমাদের প্রতিবেশী দেশটি। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার হতে পারে ৯.৫ শতাংশ। ভারতের আর এক প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের এ বছরের জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে -১.৫ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৩.৩ এবং ২০২১ সালে হবে ২.০ শতাংশ, ভবিষ্যদ্বাণী আইএমএফ-এর।